উদ্যাপন: দুর্গাবাড়ি মোড়ে গৌড়ের গৌরব অনুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র
১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট। স্বাধীনতা পেয়ে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা তুলে উদ্বেলিত হয়েছিল গোটা ভারত। আনন্দে মেতেছিল ভারতবাসী। কিন্তু দেশভাগের কারণে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) অংশ মালদহ জেলা তখন ডুবে হতাশার অন্ধকারে। জেলার প্রশাসনিক ভবনে ১৪ অগস্ট উঠেছিল পাকিস্তানের পতাকা।
শেষ পর্যন্ত জেলাবাসীর প্রবল আন্দোলনের চাপে বদলে যায় সিদ্ধান্ত। কয়েকটি থানা এলাকা বাদ রেখে মালদহ জেলার বেশিরভাগ অংশই অন্তর্ভুক্ত হয় ভারতে। স্বাধীনতা দিবসের তিন দিন পর জেলাশাসকের প্রশাসনিক ভবনে উত্তলিত হয় তেরঙা পতাকা। মালদহবাসী প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল দেশের স্বাধীনতা দিবসের প্রায় ৭২ ঘণ্টা পরে। তাই জেলার আবেগের সঙ্গে যুক্ত ১৮ অগস্টের এই দিনটিকে নিয়ম মেনে পালন করা হয় মালদহে। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হল না। এ দিন মালদহের ইংরেজবাজার শহরের দুর্গাবাড়ি মোড় সংলগ্ন বাবুপাড়ায় তোলা হল জাতীয় পতাকা।
তবে মালদহের এই স্বাধীনতা প্রাপ্তির দিনটিকে স্মরণে রেখে এবারে একটি বিশেষ সম্মান চালু করল জেলাবাসীদের একাংশ। একটি সংগঠন একটি বিশেষ সম্মান দেওয়া শুরু করল। উদ্যোক্তাদের দাবি, সংগঠনটি অরাজনৈতিক। সম্মানটির নাম ‘গৌড়ের গৌরব’।
এ দিন প্রথম মরণোত্তর ‘গৌড়ের গৌরব’ সম্মান পেলেন মালদহের রূপকার বলে পরিচিত গনিখান চৌধুরী। এ ছাড়া এই সম্মান তুলে দেওয়া হয়েছে ভারতের চন্দ্রযান ২ অভিযানের সঙ্গে যুক্ত মালদহের দুই কৃতী সন্তান সুহাস মুখোপাধ্যায় ও গৌতম মানিকেও। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও জেলার মুখ উজ্জ্বল করা ক্রিকেটার তুষার পালকেও দেওয়া হয়েছে এই বিশেষ সম্মান।
ব্রিটিশ আইনজ্ঞ সিরিল জন র্যাডক্লিফকে দুই দেশের সীমানা নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ৯ অগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের কাছে দুই দেশের সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত সুপারিশ জমা দিয়েছিলেন র্যাডক্লিফ। তার ভিত্তিতেই ১৬টি থানা এলাকা সম্বলিত মালদহ জেলা চলে যায় পাকিস্তানের দখলে।
প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, তখন রাস্তায় নেমেছিলেন জেলাবাসী। হিন্দু, মুসলিম যৌথভাবে প্রতিবাদ করে জানিয়ে দিয়েছিল যে মালদহকে রাখতে হবে ভারতেই।
এই তীব্র ক্ষোভের আঁচ পেয়ে ফের পুনর্গঠিত হয় সীমান্ত। নাচোল, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর এই পাঁচটি থানা বাদে পুরো মালদহই ফের ভারতভুক্ত হয় ১৮ আগস্ট।
প্রথম জেলাশাসক অশোক সেন ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলা প্রশাসনিক ভবনে। সে দিনই ফিরে যায় পাকিস্তানি সেনা। তাই ১৮ অগস্ট দিনটির সঙ্গে মালদহের আবেগ জড়িয়ে। রবিবার সকালে ইংরেজবাজারের বাবুপাড়ায় ভারতমাতার ছবিকে সাক্ষী রেখে জাতীয় পতাকা তোলেন ইংরেজবাজার পুরসভার দুই কাউন্সিলর অম্লান ভাদুড়ি ও প্রসেনজিৎ দাস।
এ দিকে এ দিন গৌড়ের গৌরব সম্মান কমিটির অন্যতম আয়োজক দেবদীপ দত্ত বলেন, ‘‘প্রতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে জেলার রূপকারদের এই গৌড়ের গৌরব সম্মাননা দেব।’’