বুধবার সকালে রাঙাপানি স্টেশনে অয়েল ট্যাঙ্কার ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। নিজস্ব চিত্র।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস এবং চক্রধরপুরে মুম্বই মেলের দুর্ঘটনার স্মৃতি উস্কে ফের উত্তরবঙ্গে মালগাড়ির লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা এক সঙ্গে অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। রাঙাপানিতে বুধবারের ওই দুর্ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। কিন্তু কেন এ ভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে? তা-ও আবার সেই রাঙাপানি-চটেরহাট সেকশনেই? রেল সূত্রের দাবি, রাঙাপানির পাশে নুমালিগড় তৈলশোধনাগার কেন্দ্রের দিকে খালি ট্যাঙ্কার যাওয়ার সময় সেটি লাইনচ্যুত হয়। জানা গিয়েছে, মূল লাইন থেকে লুপ লাইনে ওই কেন্দ্রের লাইন। মূল লাইন থেকে সেই লাইনে ঢোকার আগে একটি স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল পার করে একটি স্বয়ংক্রিয় ‘পয়েন্ট’-এর (ট্রেন এক লাইন থেকে অন্য লাইনে সরানোর জায়গা) উপর দিয়ে এগোচ্ছিল। সে পয়েন্টের কাছেই লাইনচ্যুত হয় কামরাগুলি।
রেল সূত্রের দাবি, ‘পয়েন্ট’-এ গোলমাল থাকলে, এ রকম লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। তবে রাঙাপানির কাছে নুমালিগড় তৈলশোধনাগার কেন্দ্র থেকে ওই কেন্দ্রে ঢোকার লাইনটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রেলকে টাকা দেওয়া হয় বলেই জানান রেলের আধিকারিকেরা। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কতটা রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে? কিছু দিন আগেও কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলাকালীন রেলের সেফটি কমিশনারের কাছে ট্র্যাকম্যান, পয়েন্টসম্যানের মতো নিরাপত্তা সংক্রান্ত শূন্য পদগুলি নিয়ে সরব হয়েছিলেন রেলকর্মীরা। তা হলে কি লোক কম থাকার জন্যে যথাযথ ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না? যদিও তা মানছে না রেল। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলেন, ‘‘শূন্য পদ থাকলেও, যার যেটুকু কাজ তা করতেই হবে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এ রকম হয়েছে তা আগাম বলার জায়গা নেই। তদন্ত চলছে।’’
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র তথা উত্তরবঙ্গ পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রকই বেলাইন বলে এ সব দুর্ঘটনা ঘটছে। সংসদে দুর্ঘটনা নিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের কোনও বক্তব্য নেই। অথচ, বুলেট ট্রেন, বন্দে ভারত এক্সপ্রেস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্তুতি গেয়ে যাচ্ছেন।’’ শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ পাল্টা বলেন, ‘‘পার্থপ্রতিমবাবু রাজ্যেরও সমালোচনা করুন। নির্বাচনের পরেই পর পর কেন দুর্ঘটনা, কারও কোনও অভিসন্ধি রয়েছে কি না, সেটাও দেখা দরকার। ভবিষ্যতে যাতে আর এ রকম না হয়, তা নিশ্চয় রেলমন্ত্রক বিচক্ষণতার সঙ্গে দেখছে।’’