সেলুনে কাজ করে লুকিয়ে স্কুলে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে চমকে দিলেন মহাবীর

ইসলামপুরের শান্তিনগর এলাকাতে ছোট একটি বাড়ি। মহাবীরের বাবা জহরলাল ঠাকুর চাইতেন ছেলে নিজেদের পেশাটা ভাল ভাবে রপ্ত করে নিয়েই ব্যবসায় মন দিক।

Advertisement

অভিজিৎ পাল

ইসলামপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৭ ১৪:৩৮
Share:

দৃষ্টান্ত: নিজের স্কুলে মহাবীর। নিজস্ব চিত্র

সেলুনের উপর নির্ভর করে সংসার চলে। তাই বাবা বরাবরই চেয়েছিলেন পড়াশোনা ছেড়ে ছেলে সেলুনে কাজ করেই সংসারের হাল ধরুক। তবে বাবার কথা শুনে সেলুনে কাজ করলেও পড়াশোনা ছাড়তে পারেনি সে। সেলুনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেও উচ্চমাধ্যমিকে ৭৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে এলাকার লোকেদের নজর কেড়েছেন ইসলামপুরের সুকান্ত স্মৃতি বিদ্যালয়ের ছাত্র মহাবীর ঠাকুর।

Advertisement

ইসলামপুরের শান্তিনগর এলাকাতে ছোট একটি বাড়ি। মহাবীরের বাবা জহরলাল ঠাকুর চাইতেন ছেলে নিজেদের পেশাটা ভাল ভাবে রপ্ত করে নিয়েই ব্যবসায় মন দিক। তাঁর আশা ছিল, এতে সংসার খানিকটা হলেও স্বচ্ছল হবে। তাই স্কুলে যেতে গিয়ে বাবার কাছে বকুনিও খেয়েছে মহাবীর। কিন্তু তাতে কী? বাবার বকুনি সয়েও স্কুল গিয়েছে সে। পড়তেও গিয়েছে বাবাকে না বলে। মহাবীরের এই ইচ্ছেকে অবশ্য বরাবরই উত্সাহ যুগিয়েছেন তার মা গায়ত্রীদেবী। তিনি কিছু বাড়িতে রাঁধুনির কাজ করে সংসারে সাহায্য করতেন।

মহাবীর তিনটি বিষয়ে ৮৫ শতাংশের উপর নাম্বার পেয়েছে। তার কথায়, ‘‘বাবা চাননি স্কুলে গিয়ে সময় নষ্ট করি। কিন্তু বাবার কথায় অবাধ্য না হয়েই সংসার চালাতে কাজ করেছি। ইচ্ছে স্কুলশিক্ষক হওয়ার। কোনও সংস্থা এগিয়ে আসলে আমার পডাশোনা করতে সুবিধে হত।’’ গায়ত্রীদেবী বলেন, ‘‘আমার ছেলে পড়াশোনায় আগাগোড়াই ভাল। সেলুনে কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও সে বাড়িতে ঢুকে পড়াশোনা করেছে। ও যতটা চায় পড়াশোনা করুক এটা চাই, তবে আর্থিক সহযোগিতা না পেলেও তা সম্ভব নয়।’’

Advertisement

মহাবীরের এই ফলাফলে খুশি স্কুল কর্তৃপক্ষও। স্কুলের শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলির ছেলে মেয়েদের অনেকেই এই স্কুলে পড়াশোনা করে। মহাবীরকে দেখে অনেকেরই পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘নিজের প্রচেষ্টা না থাকলে এত ভাল ফল কেউ করতে পারত না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement