সিসি ক্যামেরা ঠিক করা চলছে ইংরেজবাজারের একটি স্কুলে। নিজস্ব চিত্র
ঘটনা এক, করোনা আবহে বাবার কাজ হারিয়েছিলেন। সংসারে অভাব। তাই ভাল পাত্রের খোঁজ পেয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্ত মেয়ের পড়াশোনার ইচ্ছে ছিল। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা মেয়েটির শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের বুঝিয়ে ওই ছাত্রীর মাধ্যমিকে ফর্ম পূরণ করার ব্যবস্থা করেছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তাতে রাজি হন মেয়টির শ্বশুর বাড়ির লোকজন। উত্তর দিনাজপুরের একটি স্কুলের ওই ছাত্রী আজ, বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে। ছাত্রী আশাবাদী, ভাল ফল করবে সে।
ঘটনা দুই, বাড়িতে রোজগারের টান। বাবা অসুস্থ। তাই পড়াশোনা বন্ধ করে পাড়ি দিয়েছিল ভিন্ রাজ্যে। কিন্ত ওই ছাত্রটি স্কুলে আসছে না জেনে, স্কুলের শিক্ষকেরা ছেলেটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বাড়ির লোককে বুঝিয়ে শিক্ষকেরাই ওই ছাত্রটিকে স্কুলে ফেরান। ট্রেনে ফেরার খরচের ব্যবস্থাও করেন তাঁরা। সেই ছাত্রটিও আজ, জীবনের প্রথম গুরত্বপূর্ণ পরীক্ষায় বসবে। তার কথায়, ‘‘আমি খুশি পরীক্ষা দিতে পারব। স্যরেরাই আমাকে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করেন। প্রতিকূলতা রয়েছে। কিন্ত ভাল লাগছে, মাধ্যমিক পরীক্ষাটা দিতে পারছি।’’
ঘটনা তিন, এক ছাত্রীর পরিবারের সদস্যেরা বিড়ি বাঁধাইয়ের কাজে যুক্ত। স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, এ বার মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছাত্রীটির। ফর্ম পূরণের দিন পেরোতে চললেও মেয়েটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ফোনেও যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা তার বাড়ি গিয়ে জানতে পারেন, মেয়েটি মায়ের সঙ্গে বিড়ি বাঁধায়ের কাজে অন্যত্র চলে গিয়েছে। অনেক কষ্টে স্কুলের তরফে মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে স্কুলে এনে মাধ্যমিকের ফর্ম পূরণ করানো হয়। সে-ও আজ মাধ্যমিক দেবে। বুধবার ওই ছাত্রী জানাল, গত দু’বছরে সে কোনও ক্লাস করতে পারেনি। বাড়িতে মোবাইল ছিল না। অভাবের কারণে, সে-ও মায়ের সঙ্গে বিড়ি বাঁধইয়ের কাজে যায় নিয়মিত। ছাত্রীর মা বললেন, ‘‘অভাবের জন্য মেয়েকে বিড়ি বাঁধাইয়ের সহযোগী হিসেবে নিয়েছিলাম। তবে ও জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় হারবে না, বলেই আমার বিশ্বাস।’’
উত্তর দিনাজপুরে ওই ছাত্রীর স্কুলের প্রধান শিক্ষক বললেন, ‘‘আমাদের স্কুলের পড়ুয়াদের আগ্রহ রয়েছে। তবে বেশিরভাগ পড়ুয়ার পরিবার অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে। দু’বছর পড়ুয়াদের সঙ্গে স্কুলের যোগ খুব কম ছিল। অনেকের মোবাইল ছিল না। তার পর স্কুল বন্ধ ছিল। তাই তাদের জন্য এ বার মাধ্যমিক খুব সমস্যার।’’
আর-এক হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাসুদেব দে বলেন, ‘‘এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কয়েক জনের পরিবারকে করোনা-কালে নানা সমস্যার পড়তে হয়েছে। কয়েকজনকে পড়ুয়াকে ফেরানো সম্ভব হয়েছে। সব প্রতিকূলতা হারিয়ে ওরা ভাল ফল করবে।’’