জীবিকা: দোকানে ব্যস্ত কণিকা।
মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু আর পাঁচটা মায়েদের মতো তিনি নিজের মেয়েকে পরীক্ষাকেন্দ্রে দিয়ে আসতে পারেননি। কারণ মেয়ে যখন পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে, তখন মা কণিকা বর্মণ ব্যস্ত ভ্যান রিকশায় বাদাম ভাজতে এবং ফুচকা তৈরি করতে।
কণিকার বড় মেয়ে পূজা এবছর মাধ্যমিক দিচ্ছে। ইচ্ছে থাকলেও মেয়ের সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাবেন বা দিয়ে আসবেন, তার কোনও উপায় নেই। কারণ স্বামী প্রদীপ বর্মণ মারা যাওয়ার পর থেকে এই দোকানের (ভ্যান রিকশা) রোজগার দিয়েই চার মেয়ের খাওয়া-দাওয়া ও পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে হচ্ছে। চার মেয়ের মধ্যে পূজা এ বছর মেখলিগঞ্জ ইন্দিরা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক দিচ্ছে। বাকি তিনজনের মধ্যে পায়েল নবম, পপি সপ্তম এবং পিঙ্কি চতুর্থ শ্রেণি। মেখলিগঞ্জ পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কণিকার স্বামী প্রদীপ ভ্যান রিকশা নিয়ে ঘুরে ঘুরে ফুচকা বিক্রি করতেন। সেই আয়েই চলত ছ’জনের সংসার। কিন্তু গত বছর হঠাৎ করেই হৃদরোগে মৃত্যু হয় প্রদীপের। তারপর থেকেই সংসার নেমে আসে বিপর্যয়।
চার মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন কণিকা। বেশ কিছুদিন এভাবে চলার পর স্বামীর সেই ভ্যান রিকশার সেই দোকান নিয়েই নেমে পড়েন উপার্জনের আশায়। প্রতিদিন সকালে রান্না সেরে তিনি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে একটি স্কুলের সামনে সেই ভ্যান রিকশা নিয়ে সকালে হাজির হন, বাদাম ভাজা, লুচি তরকারি বিক্রি করেন। বিকেল পর্যন্ত দোকান চালিয়ে বাড়ি ফেরেন। ।
কথা প্রসঙ্গে কণিকা জানান, চার মেয়েকে মানুষ করতে এ ছাড়া আর উপায়ও ছিল না। তবে সরকারি সাহায্যের জন্য পুরসভার আবেদন করার পর মঙ্গলবারই ন্যাশনাল ফ্যামিলি বেনিফিট স্কিমে চল্লিশ হাজার টাকা পেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, বিধবা ভাতার জন্য আবেদন জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।