ভোট দিলে কি ফিরে পাব ছেলেকে, প্রশ্ন মায়ের

ভোটের আঁচ কেমন ভাবে পড়ছে প্রত্যন্ত এলাকায়? কেমন আছেন দুঃস্থ, একদা নির্যাতিত, বা প্রান্তিক ভোটাররা? জনজীবনের সেই ছবি তুলে ধরছে আনন্দবাজার।

Advertisement

পার্থ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯ ১১:১৮
Share:

স্মৃতি: ছেলে তুষারের ছবি হাতে পার্বতী বর্মণ। ছবি: নারায়ণ েদ

“ভোট দিলে কি ছেলেকে ফিরে পাব?”

Advertisement

বারো বাই বারো ফুটের ঘরে একটা বিছানা। সেই বিছানারই এক কোণে বসা বৃদ্ধা পার্বতী বর্মণ প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন৷ গত প্রায় তিন মাস দিন-রাতের বেশিরভাগ সময়টা ওই বিছানাই ঠিকানা পার্বতীদেবীর৷ ঘরের চার পাল্লার কাচের জানালাটা সব সময় জন্য বন্ধ থাকে৷ টানটান করে টাঙানো পর্দা৷ দিনের বেলায় সামান্য আলো ঢোকে ঘরটায়৷ কেউ দেখা করতে এলে জ্বলে ওঠে টিউবলাইট৷ তারপর আবার বন্ধ৷ আবার অন্ধকার৷

অন্ধকার যেন গোটা বাড়ি জুড়েই। ঘরের বাইরেই ছোট্ট উঠোন৷ এক কোণে একটি মোটরবাইক। অনেকদিন ধরে যে সেটা চালানো হয়না, তা একবার তাকালেই বোঝা যায়৷ বাকি উঠোন ফাঁকা৷ “অথচ, যে কোনও ভোট এলেই সকাল থেকে সন্ধ্যা, এমনকি কোনও কোনও দিন রাতেও গমগম করতো গোটা উঠোনটা’’, মনে পড়ছে ওই বাড়িরই বাসিন্দা অরুণ বর্মণের৷ সম্পর্কে পার্বতীদেবীর ভাসুর তিনি৷ অরুণ যোগ করলেন, “বাড়ির তরতাজা ছেলেটার মৃত্যু যেন সব কিছুই ওলট-পালট করে দিল৷”

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ছেলেটা, অর্থাৎ তুষার বর্মণ। পার্বতীদেবীর একমাত্র ছেলে৷ ২২ জানুয়ারি তপসিখাতার জয়বাংলা হাটে খুন হন তৃণমূলকর্মী তুষার৷ অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে পঞ্চায়েতের উপ প্রধান শম্ভু রায় তুষারকে গুলি করে খুন করে। পরে এক এক করে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে শম্ভু-সহ বাকি অভিযুক্তরা৷ কিন্তু তারপরও চাপা আতঙ্ক থেকে গিয়েছে এলাকায়৷

তুষারের বাড়ি তপসিখাতার পাকুরিতলা এলাকায়৷ তুষারের বাবা প্রয়াত তরুণচন্দ্র রায় এক সময় তৃণমূলের বুথ সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন৷ একটি দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর পর দলে গুরুত্ব বাড়ে তুষারের৷ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়েও দলের সহকারী বুথ সভাপতি দায়িত্বে ছিলেন তুষার৷ নির্বাচনী লড়াইয়ের কৌশল ঠিক করতে বাড়ির উঠোনটাতে ছোট ছোট বৈঠক লেগেই থাকতো৷ অথচ, এ বার গোটা এলাকায় দেখা মিলল না কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকার৷ চায়ের দোকানেও নেই ভোট নিয়ে কোনও চর্চা৷ অরুণবাবু বলছিলেন, “তুষারের মৃত্যুর পর ভোট, রাজনীতি এ সব নিয়ে ক্ষোভের পাশাপাশি মানুষের মনে একটা আতঙ্ক ঢুকে গিয়েছে৷ সেজন্য আমরা নিজেরাও সন্ধ্যা হতেই বাড়ির দরজা বন্ধ করে দিই৷”

তুষারের ছবি কোলে নিয়ে সেই বিছানায় বসে পার্বতীদেবী বলছিলেন, “মানুষের ভালর জন্য এত কিছু করেছে৷ ভোট এলেই দলকে জেতাতে দিন-রাত এক করে দিত৷ কতদিন এমন হয়েছে, ভাতের থালা নিয়ে নিয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করে রাত পার হয়ে গিয়েছে৷ অথচ, এ বারের ভোটে ও আর নেই৷ ভোট দিলে কি ছেলেকে ফিরে পাব?”

পুত্রহারা মায়ের এই প্রশ্নই ঘুরছে ভোটের হাওয়ায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement