—ফাইল চিত্র।
তৃণমূল ও বামেরা তো এনআরসি’র বিরোধিতার পথে নেমেছে শুরু থেকেই। এ বারে ফেসবুকে একাধিক গ্রুপ তৈরি করে এনআরসি’র বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সাধারণ মানুষ। গত এক মাসে এমন একটি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা পঞ্চাশ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। যেখানে অসমে ওই ১৯ লক্ষ মানুষের কী অবস্থা, ডিটেনশন ক্যাম্পেই বা কী হচ্ছে, সে সবও যেমন তুলে ধরা হচ্ছে। তেমনই এনআরসি নিয়ে দলমত নির্বিশেষে পথে নামার প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। গ্রুপে অনেকেই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এমন অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের আশঙ্কা, এমন চললে উত্তরবঙ্গ তথা গোটা বাংলাতেই সংগঠনে ধাক্কা লাগতে পারে।
বিজেপি’র জলপাইগুড়ি জেলার পর্যবেক্ষক তথা কোচবিহারের বাসিন্দা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “এ সবের পিছনে তৃণমূল ও বামেরা রয়েছে। মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা চলছে। আর কিছুদিন অপেক্ষা করুন, এমন গ্রুপে আর কেউ থাকবে না। নোটবন্দিতে বিরোধীদের প্রচার নিয়ে যা হয়েছিল এ বারেও ঠিক তাই হবে।” বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করছে, নভেম্বরেই লোকসভায় নাগরিকত্ব বিল পাশ হবে। তার পরেই অবস্থা পাল্টে যাবে। তাঁদের দাবি, ওই বিলে স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়েছে শরণার্থীদের দেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। যারা অনুপ্রবেশ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই গ্রুপে রয়েছেন কোচবিহারের বাসিন্দা রসিদুল আহমেদ। তাঁর কথায়, “যেভাবে এনআরসি’র নামে মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে তা কেউ মেনে নেবে না। মানুষের মতামত থেকেই তা পরিস্কার।” ওই গ্রপের এক সদস্য অরূপ মজুমদার লিখেছেন, “কমিটি আপনার মনের কথা জানে। সেই অনুযায়ী কর্মসূচি শীঘ্রই ঘোষণা করতে চলেছে।” যদিও অরূপবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
অসমের নাগরিকপঞ্জি ঘোষণা হতেই ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। তৃণমূল ও বামেরা রাস্তায় নেমে প্রচার করে, অসমে নাগরিকপঞ্জির বাইরে থাকা ১৯ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১৪ লক্ষ হিন্দু। বিজেপি সরকারের আমলে কেউ সুরক্ষিত নন। তা নিয়ে বিজেপি পাল্টা প্রচারে নামলেও নীচুতলার নেতারা নানা প্রশ্নে কোণঠাসা হয়ে পড়তে শুরু করেন বলে দল সূত্রেই খবর। অসম লাগোয়া জেলা কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের বহু মানুষ বিবাহসূত্রে ও চাকরি সূত্রে অসমের বাসিন্দা। তাঁদের অনেকের নাম নাগরিকপঞ্জিতে নেই। কোচবিহারের মেয়েদের যাদের বিয়ে হয়েছে অসমে, তাঁদের অধিকাংশের নাম নেই। তা নিয়ে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়তে থাকে। তার পরেই এনআরসি-র আতঙ্কে একের পর এক মৃত্যুর অভিযোগ উঠতে শুরু করে। এই সময়েই ফেসবুকে গ্রুপ তৈরি করে প্রতিবাদ শুরু হয়। অসমে ডিটেনশন ক্যাম্পে মানুষদের উপর অত্যাচার হচ্ছে বলেও ওই গ্রুপে অনেকে অভিযোগ করেন। তৃণমূলের কোচবিহার জেলার প্রাক্তন সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “অসমে কীভাবে সাধারণ মানুষদের উপরে অত্যাচার চলছে তা প্রতিদিন প্রকাশ্যে আসছে। তাই সমস্ত মানুষ একসঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাইছেন। আমরা তাঁদের পাশে থাকবো।”