মোহন কচ্ছপ। —ফাইল চিত্র।
শীতের মরসুম শুরু হতে না হতেই কোচবিহারের বাণেশ্বরে ‘মোহন’-মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে পরিবেশপ্রেমী থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। অভিযোগ, এ বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের ১২ তারিখ পর্যন্ত অন্তত সাতটি মোহনের মৃত্যু হয়েছে। বেশ কিছু মোহন অসুস্থও হয়েছে। বর্তমানে ছ’টি মোহন চিকিৎসাধীন। বন দফতর সূত্রে দাবি, মৃত মোহনের দেহের ময়না তদন্ত করেও মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধন্দ কাটেনি। মৃতদেহে কোনও সংক্রমণের প্রমাণ মেলেনি। নেই কোনও আঘাতজনিত কারণও। এই পরিস্থিতিতে অতিবিপন্ন প্রজাতির তালিকাভুক্ত এই কাছিমের অস্তিত্বরক্ষা ঘিরে দুশ্চিন্তা বেড়েছে।
গবেষকদের একাংশের ধারণা, সপ্তদশ শতাব্দীতে কোচবিহারের মহারাজা প্রাণ নারায়ণের আমলে বাণেশ্বর শিবমন্দিরটি সংস্কার ও পুর্ণনির্মাণ হয়। সম্ভবত সেই সময়েই শিবদিঘিটি খনন হয়। সে সময় থেকেই মোহনেরা রয়েছে এই দিঘিতে। তবে এ নিয়ে একাংশের ভিন্ন মতও রয়েছে। তাঁদের ধারণা, আরও অনেক আগে থেকে মোহনেরা রয়েছে শিবদিঘিতে।
মোহন রক্ষা কমিটির অভিযোগ, চলতি বছরের নভেম্বর থেকে জেলায় সাতটি মোহনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছর শীতের মরসুমেও এমন ঘটনা ঘটে। কমিটির সভাপতি পরিমল বর্মণ বলেন, “পথ ও ট্রেন দুর্ঘটনায় নানা সময় মোহন মৃত্যু হয়েছে। কমিটির তরফে চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাসেবক রেখে নজরদারিও হচ্ছে। কিন্তু মোহন-মৃত্যু রুখতে একটা স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার।’’
বন দফতর সূত্রে খবর, নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে মৃত তিনটি মোহনের দেহাংশের ‘ভিসেরা’ পরীক্ষার জন্য পাঠান হয়। কোচবিহারের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মৃত তিনটি মোহনের দেহাংশ ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠান হয়েছে। তার রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হতে পারে।” মহকুমাশাসক (কোচবিহারের সদর) কুণাল বন্দোপাধ্যায় বলেন, “শিবদিঘির মোহনদের নিয়ে সব সময়েই সতর্ক থাকে প্রশাসন। ”
কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাষ্ট বোর্ডের আওতায় বাণেশ্বরের শিবদিঘি। সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছিল, শিবদিঘির মোহনদের খাবারের সঙ্কট হচ্ছে। আবার দিঘির জলের উষ্ণতার কম-বেশি হওয়াকেও মোহন-মৃত্যুর কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়েছে। দিঘিতে দূষণের জেরেও মোহনদের জীবন সংশয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বোর্ডের তরফে অবশ্য জানান হয়েছে, মোহন-সুরক্ষায় নানা ব্যবস্থা নেয় তারা। সারা বছর নজরদারিও হয়। বোর্ডের সদস্য, মহকুমাশাসক কুণাল বন্দোপাধ্যায় বলেন, “দিঘির জলের নমুনা পরীক্ষা করে ব্যাকটিরিয়া বা ক্ষতিকর কিছু মেলেনি। জলের উষ্ণতা বজায় রাখতে জলস্তরের গভীরতা কমানো হয়েছে। অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখতে ফোয়ারার ব্যবস্থা হয়েছে। মোহনের অসুস্থতার প্রবণতাও তুলনায় অনেক কমেছে।” যদিও তাতে মোহনদের নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না পরিবেশপ্রেমী থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের প্রত্যেকেরই দাবি, পরিবেশ আর জীব বৈচিত্র্যের পাশাপাশি, ঐতিহ্য রক্ষায় মোহনদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হোক।