স্কুলের একটি ঘর
স্কুলের ঘর, বারান্দা থেকে মাঠ অবধি ছড়িয়ে থাকে মদের বোতল। স্কুল শুরুর প্রথমে তা সাফা করতে হয় শিক্ষকদের। এমনই অবস্থা ফাঁসিদেওয়া ব্লকের কান্তিভিটা এলাকার হরিসিংহ প্রাথমিক স্কুলের। ফলে স্কুলটিতে ছাত্রসংখ্যা কমতে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে। কার্যত পরিত্যক্ত হতে বসেছে স্কুলটি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দাবি, ‘‘ক্লাস শুরুর আগে প্লাস্টিকের গ্লাস থেকে মদের বোতল, বাদাম, চানাচুরের প্যাকেট পরিষ্কার করতে হয়।’’ এই অবস্থায় অভিভাবকরা তাঁদের ছেলেমেদের স্কুলে পাঠাবেনই বা কেন, উঠেছে প্রশ্ন।
এর আগে কোচবিহারের উছলপুকুরি গ্রাম পঞ্চায়েতের শালতলি এডেড প্রাইমারি স্কুলেও একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। সেই খবরও প্রকাশিত হয়েছে আনন্দবাজারের পাতাতেই। এ বারে একই ছবি ফাঁসিদেওয়ার হরিসিংহ প্রাথমিক স্কুলে। ফাঁসিদেওয়া ব্লকের প্রাথমিক স্কুলগুলির দায়িত্বে থাকা এসআই অরিজিৎ গোলজার জানান, ‘‘স্কুলের এক দিকে রেললাইন, অন্য দিকে এশিয়ান হাইওয়ে-২। ফলে স্কুলে যেতে সমস্যার কথা ভেবে অভিভাবকরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের পাঠাতে চান না।’’
গত কয়েক বছর ধরেই স্কুলের ছাত্র সংখ্যা কমছে। গত বছর স্কুলে ছাত্র সংখ্যা ছিল ১৪। এ বারে তা ৯। অভিভাবক থেকে স্থানীয় লোকজন, সকলেই বলছেন, এর প্রধান কারণ হল স্কুলচত্বরে অসামাজিক কাজকর্ম। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, স্কুল ইংরেজি মাধ্যম না করা হলে পড়ুয়া সংখ্যা আরও কমবে। প্রশাসনের কর্তাদেরও সে কথা জানানো হয়েছে।
স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, একটি ঘরে তিন জন পড়ুয়াকে নিয়ে ক্লাস করছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জগদ্বন্ধু রায়। পাশের ঘরেই হচ্ছে মিড ডে মিলের রান্না। বাকি ঘরগুলির কোনওটিতে নোংরায় ভর্তি। কোনটির মাথায় চাল নেই। শৌচালয়েও মদের ভাঙা বোতল পড়ে আছে। রান্নার জন্য কয়েক মাস আগে যে ঘরটি বানানো হয়েছিল, প্রধান শিক্ষক সেটি দেখিয়ে জানালেন, তালা ভাঙা হয়েছে। স্কুল বন্ধ হলেই অনেকে এই ঘর নোংরা করে যায়। দু’টি নলকূপ চুরি হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা হলেই সমাজবিরোধীদের আখড়া হয় স্কুলের বারান্দা এবং তার আশপাশ। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়াতে বাসিন্দাদের ভর্তির কথা জানান হয়েছে। কিন্তু স্কুলের পরিবেশ এতটাই খারাপ যে, স্কুল থেকে অবিভাবকরা তাঁদের ছেলেমেদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’’ পড়ুয়ার সংখ্যা এতই কম যে, অভিভাবকের অভাবে ভিলেজ এডুকেশন কমিটিও গড়া যায়নি।
কান্তিভিটা এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তৃণমূলের গৌতম রায় বলেন, ‘‘স্কুলে অসামাজিক কাজের বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। তখন পুলিশি অভিযানের সময়ে গোলমাল বন্ধ হয়ে যায়। পরে তা আবার চালু হয়।’’ দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই বলেন, ‘‘মদের আসর যাতে না বসে, স্থানীয়দের সঙ্গে সে দিকে নজর রাখতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও।’’