গরমে ছাতা নিয়ে লাইন দিয়ে কাজে যোগ দিতে যাচ্ছেন মোহরগাঁও চা বাগানের শ্রমিকেরা।ছবি:বিনোদ দাস
‘মেঘ দে, পানি দে’— বৃষ্টির প্রার্থনায় উত্তরের চা বলয়ে সন্ধ্যা নামলে মাদলের তালে যেন ভাওয়াইয়া সুর বাজার জোগাড়! প্রথম ‘ফ্লাশ’ ফুরনোর পথে, এত দিনে দ্বিতীয় ‘ফ্লাশ’-এর দেখা মেলার কথা। কিন্তু বৃষ্টি নেই। চা গবেষণা কেন্দ্রের প্রাথমিক পরিসংখ্যানে শীতের পরে, উত্তরের চা বলয় গড়পড়তা সার্বিক ভাবে বৃষ্টি পেয়েছে চার দিন। তাতে চা পাতা শুকিয়ে, গাছ মৃতপ্রায় অবস্থায়। দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহ চলছে। বর্তমানে উত্তরবঙ্গের গড় তাপমাত্রা, চা গাছের পক্ষে পুরোপুরি অসহনীয় না হলেও, মূল সমস্যা হচ্ছে বৃষ্টির অভাব। যার জেরে, মার্চ মাসে চা পাতা উৎপাদনে মার খেয়েছে। গত মঙ্গলবার চা পর্ষদের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে চা উৎপাদন কমেছে অন্তত ৫০ লক্ষ কেজি। দার্জিলিং, তরাই এবং ডুয়ার্স— তিন বাগিচাতেই বাড়ন্ত প্রথম ফ্লাশের উৎপাদন, কমেছে বড়-ছোট উভয় বাগানের পাতা।
চা পর্ষদের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর মার্চে উৎপাদন ছিল দু’কোটি ৯০ লক্ষ কেজির কাছাকাছি। অথচ, এ বছর মার্চ মাসের সম্ভাব্য উৎপাদন দু’কোটি ৪০ লক্ষ কেজি হতে পারে। সব চেয়ে বেশি উৎপাদন মার খেয়েছে ডুয়ার্সে। উত্তরবঙ্গের চা বলয়ের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ থেকে ৩৮ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। রাতের দিকে তাপমাত্রা কমে হচ্ছে ২২-২৩ ডিগ্রির কাছাকাছি। তাপমাত্রার এই হের-ফের চা গাছ সহ্য করতে পারে বলে মহল্লার দাবি। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায়, রোদে শুকিয়ে যাওয়া চা পাতায় আক্রমণ হচ্ছে কীট-পোকার। তাতেও কমছে উৎপাদন। চা বাগান পরিচালকদের সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন’-এর ডুয়ার্স শাখার চেয়ারম্যান জীবনচন্দ্র পাণ্ডে বলেন, “প্রথম ফ্লাশের সর্বনাশ হয়েছে, এ বার দ্বিতীয় ফ্লাশও বিপদের মুখে। বৃষ্টি না হলে, দ্বিতীয় ফ্লাশকেও বাঁচানো যাবে না।”
শীতের সুখা সময়ের পরে বর্ষার আগে পর্যন্ত চা বাগানে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির প্রয়োজন হয়। সপ্তাহে এক দিন রাতে বৃষ্টি হলেই চা বাগানের পক্ষে যথেষ্ট বলে দাবি। গত মার্চ মাস থেকে বৃষ্টি নেই বলে জানাচ্ছে চা মহল্লা। ছোট-বড় সব চা বাগানেই নিয়মিত জল দেওয়া হচ্ছে। জল সেচ প্রসঙ্গে ক্ষুদ্র চা বাগানের সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “জল দেওয়া হচ্ছে বলেই চা গাছগুলি বেঁচে আছে। কিন্তু পাতা উৎপাদনের জন্য বৃষ্টি প্রয়োজন।” ‘টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’র ডুয়ার্স-তরাই শাখার সচিব সুমিত ঘোষ বলেন, “চা গাছের গোড়া শুকিয়ে গিয়েছে। যা অবস্থা, তাতে কতদিন পাতা মিলবে তা নিয়েই সংশয়।” এই পরিস্থিতিতে চা বাগান বন্ধেরও আশঙ্কা করছেন অনেকে। চা পর্ষদের দাবি, পরিস্থিতির উপরে নজর রয়েছে। সপ্তাহ দু’য়েক পর্যবেক্ষণের পরে, আলোচনায় বসতে পারে পর্ষদ।