প্রতীকী ছবি
কিঙ্করকিশোর রায়কে মনে আছে? না, এই প্রজন্মের অনেকেই এই নামটির সঙ্গে পরিচিত নয়। তবে তিরিশ থেকে পঞ্চাশের কোঠায় যাঁদের বয়স, তাঁদের অনেকেই হয়তো বলে উঠবেন, মনে থাকবে না কেন! বিমল করের কিকিরা তো! সাহিত্যিক বিমল করের সৃষ্ট জাদুকর-কাম-গোয়েন্দা চরিত্র। আর গোয়েন্দা অর্জুন? জলপাইগুড়ি শহরেই তো তাঁর বাড়ি। চরিত্রের লেখক সমরেশ মজুমদার। গরগর করে বলে দেবেন সকলে।
এই প্রজন্মের যাঁরা কিকিরা বা অর্জুনের কর্মকাণ্ড পড়েননি, এবার তাদের চেনার অভাবনীয় সুযোগ এনে দিল লকডাউন পরিস্থিতি। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন ঘোষণা করে বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করেছে সরকার। গৃহবন্দি মানুষ অবসর সময় কাটাতে নানা উপায় নিজেরাই খুঁজে নিচ্ছেন, অন্যদের খুঁজে দিচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন বিখ্যাত লেখকদের জনপ্রিয় বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ। যে সংস্করণ মোবাইলের পর্দায়, কম্পিউটারের স্ক্রিনে পড়া যায়। বাংলা সাহিত্যের সব নামকরা চরিত্রেরা ফিরে আসছে সেই সব পিডিএফ সংস্করণে। একই ভাবে ফিরে আসছে কিকিরা-অর্জুনেরাও। পিডিএফের দদৌলতেই আজকের ঘরবন্দি কিশোর-কিশোরীরা জানতে পারল, কিকিরা আসলে কিঙ্করের ‘কি’, কিশোরের ‘কি’ আর রায়ের ‘রা’র দিয়ে তৈরি নাম।
ফিরে এসেছে একা নড়ে, মামদো, ব্রহ্মদৈত্যরাও। এরা বেশিরভাগই মজার ভূত নামেই পরিচিত। শীর্ষেন্দুর গল্পে ভূত তো আবার ছোটদের অঙ্কের সমাধানেও সাহায্য করে। সেই সব গল্পের পিডিএফ সংস্করণও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। সঙ্গে অনীশ দেবের গা ছমছমে গল্পও। ভয়পাতাল, পাতালঝড় ইত্যাদি। বাঙালির নস্টালজিয়া ফিরবে এবং পটলডাঙার সেই চরিত্র থাকবে না তাই হয় নাকি! পুরো টেনিদা সমগ্রই হাজির মোবাইলে, ই-মেলে। বাংলায় জন্ম না হলেও আরেকটি চরিত্র একসময়ে বাঙালি শিশু, কিশোর এমনকী বড়দেরও মাতিয়ে রেখেছিল। ছোকরা সাংবাদিক টিনটিন। তিব্বতে টিনটিন, মমির অভিশাপ, সোভিয়েত দেশে-র সেই সব অভিযানে ক্যাপ্টন হ্যাডক এবং কুট্টুসকে নিয়ে টিনটিন হাজির হয়ে বাঙালিকে লকডাউনের সময়ে বাড়িতে বিরক্ত হতে দিচ্ছে না।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্তা প্রশান্ত চৌধুরী নিজেও লেখালেখি করেন। তাঁর কথায়, “করোনায় আমাদের মতো প্রবীণদের আশঙ্কা আরও বেশি। তাই ঘরবন্দি আছি। আতঙ্কে আছি। এর মধ্যে একটাই তৃপ্তির বিষয় হল মোবাইলে অর্জুন থেকে ফেলুদা, বাঁটুল থেকে নন্টেফন্টেকে পাওয়া। এসব বইও এখন খুব একটা পাওয়া যায় না। লকডাউন আমাকে নস্টালজিক করেছে।”