প্রচারের জন্য অর্থ সংগ্রহে নেমেছেন অশোক ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র।
রসিদ বই ছাপিয়ে শিলিগুড়ি পুরভোটের প্রচারের খরচ জোগাড়় করতে রাস্তায় নামলেন বাম নেতারা। শুক্রবার দুপুরে দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ফ্রন্টের নেতারা ওই তহবিল সংগ্রহে নামেন। সিপিএমের দলীয় দফতর, অনিল বিশ্বাস ভবনের সামনে থেকে হিলকার্ট রোডে ঘুরে তাঁরা রসিদ দিয়ে টাকা তোলেন। বইখাতার দোকান, মোবাইলের সরঞ্জাম, জামাকাপড়়ের দোকান থেকে ফুটপাথ ব্যবসায়ী, চায়ের দোকানী সবার কাছে গিয়েই সাহায্য চাইতে দেখা গিয়েছে বাম নেতাদের। আগামী দু’দিন ধরে শহর জুড়ে এমন গণঅর্থ সংগ্রহের পর তা পুরসভার ৪৭টি ওয়ার্ডের প্রচারের জন্য খরচ করা হবে বলে ওই নেতারা জানিয়েছেন।
এ বারে পুরভোটে বামেরা মুখ হিসাবে রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবুকেই সামনে তুলে ধরেছেন। অশোকবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল প্রচারের নামে যা করছে তা ভাবা যায় না। ব্যানার, ফেস্টুন, ফ্লেক্স-এ শহর ছেয়ে ফেলেছে। ঠিকাদারদের কাছ থেকেও কাজ দিয়ে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। বিজেপি, কংগ্রেসেরও অনেক টাকা রয়েছে। আমাদের সেখানে খুবই খারাপ অবস্থা। তাই বাসিন্দাদের সাহায্য আমরা চাইছি।’’
বামেদের এই গণ অর্থ সংগ্রহ অভিযানকে কটাক্ষ করতে ছাড়়েনি বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা জানিয়েছেন, সিপিএম তো খুব ‘গরিব’ দল। ভোট-সহ কোনও অনুষ্ঠান হলেও নেতারা কৌটো হাতে রাস্তায় নামেন। আবার দলটা এমনই খারাপ অবস্থা যে, শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে প্রাসাদোপম দলীয় দফতরও বানায়। শোনা যায়, এর মাসিক রক্ষণাবেক্ষন খরচই না কি ৩০ হাজার টাকার মত।
দলের জেলা দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই ভোটে শুভানুধ্যায়ীরা সাহায্য করে থাকে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে মেনে দলের থেকেও খরচ হয়। সেখানে কিছু হলেই, কৌটো বা রসিদ বই নিয়ে রাস্তায় সিপিএম নেতাদের ঘোরাঘুরি নাটক ছাড়া কিছু নয়।’’ তিনি দাবি করেন, ‘‘সিপিএম দেশের অন্যতম বড়লোক দল। ওঁদের কোটি কোটি টাকা রয়েছে। অথচ মানুষকে বোকা বানাতে তাঁরা এই ধরণের হাস্যকর কাজকর্ম করেন। সবার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই তো প্রচার করছে। উল্টে, মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তৃণমূল ঠিকদারদের কাজ দিয়ে টাকা নিয়েছে, তা বারবার বলা হচ্ছে।’’
বামফ্রন্ট সূত্রের খবর, এবারে পুরভোটে প্রচারের টাকার জন্য দলীয় তহবিল ছাড়াও শহরের পার্টি সদস্যদের একদিনের রোজগার দিতে বলা হয়। বর্তমানে পুর এলাকায় দলের পার্টি সদস্য ২ হাজারের কিছু বেশি। এ ছাড়াও রসিদ, কুপন দিয়ে বাসিন্দাদের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। এর জন্য ‘স্পেশাল ফান্ড’ দিয়ে একটি তহবিলও গড়া হয়েছে। এ দিন বাসিন্দা এবং ব্যবাসায়ীদের যে রসিদ দেওযা হয়েছে, তাতে স্পেশাল ফান্ড লেখা ছিল। ১০ টাকা, ৫০ টাকা এবং ১০০ টাকার রসিদ ছাপানো হয়েছে। এ ছাড়াও পাড়ায় পাড়ায় ইস্তাহার, বিভিন্ন প্রচার পুস্তিকা বিলি করেও টাকা তোলা হচ্ছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কমিটিগুলি তা তুলছে।
কেন্দ্রীয় ভাবে পতাকা, পোস্টার, ভোটার স্লিপ, নকল ব্যালট ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। ফ্লেক্স, ব্যানারের খরচ স্থানীয় ওয়ার্ড কমিটি বহন করলেও নকশা কেন্দ্রীয় ভাবেই তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি সূত্রের খবর, এবার ভোটে প্রত্যেক প্রার্থীর খরচ সীমা ৬০ হাজার বেঁধে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সেই হিসেব ধরেই প্রার্থীরা খরচ করছেন বলে বাম নেতাদের দাবি। অশোকবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বিজেপির কোথাও কোথায় যা প্রচারের বহর দেখছি তাতে তো লক্ষ টাকার উপর খরচ হয়ে যাচ্ছে। কমিশনের অফিসারদের বিষয়গুলি দেখা দরকার।’’
বামেদের রাস্তা নেমে টাকা তোলা প্রসঙ্গে জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘গত তিন দশকে দলটি কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি করেছে। অথচ ভোটের আগে মুখ শুকিয়ে মানুষকে বোকা বানাতে টাকা তুলতে রাস্তায় নেমে পড়ে। সিপিএম নেতাদের উচিত এই ধরণের নাটক বন্ধ করা।’’ আবার জেলা বিজেপির সভাপতি রথীন বসু বলেন, ‘‘আমরা শুনেছি, সিপিএম পার্টির যা গচ্ছিত টাকা রয়েছে। তার সুদ মাসে সিপিএম খরচ করে শেষ করতে পারে না। তা হলে কৌটো ঝাঁকানোর নাটকের কী দরকার। এখন মানুষ সব বোঝেন।’’
এ দিন দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের তরফে বিবৃতি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, ফ্রন্টের পুরসভার ইস্তাহারকে ঘিরে নানা বক্তব্য সামনে এসেছে, যার অনেটাই সঠিক নয়।
মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এবং গরিব মানুষের জন্য জলকর ছাড়, জমির পাট্টা, বাজার নির্মাণ বামফ্রন্ট সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। অনেকগুলি কার্যকরীও হয়েছে। তবে কোনও সময় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের আইন, কখনও রেলের সদিচ্ছা বা কোনও সময় গত পুরবোর্ড কার্যকরী করতে দেয়নি। হরিজন উচ্ছেদে বামেদের নাম জড়ালেও তা আদতে রেল করেছে।