দলীয় কার্যালয়ে বসে নারায়ণ বিশ্বাস। ছবি: অমিত মোহান্ত।
দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে এ দিন আকাশ ছিল মেঘলা। সঙ্গে অবিরাম ঠান্ডা বাতাসে চড়া রোদের পরিচিত তপ্ত পরিবেশ উধাও। ১৯৯৩ সাল থেকে একটানা চার বার গঙ্গারামপুর পুরসভার ক্ষমতায় থাকা সিপিএমের কান্ডারি তথা দল নেতা নারায়ণ বিশ্বাস, মানবেশ চৌধুরীরা এদিন দিনভর দলীয় কার্যালয়ের চার দেওয়ালের মধ্যেই আটকে থাকলেন। দুপুর অবধি পাড়ায় পাড়ায় ঘুরেও দেখা মিলল না কোনও বাম প্রার্থী কিংবা কর্মীর।
উল্টো দিকে পুরসভায় বিরোধী দল তথা রাজ্যের শাসক তৃণমূলের প্রার্থী থেকে দলের সমস্ত স্তরের নেতার কাছে রবিবারটা ছিল যেন পরে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো। ছুটির দিনে তাই সাত সকালে শুকদেবপুরের বাড়ি থেকে জেলাপরিষদের সহকারি সভাধিপতি কালীপদ সরকার থেকে তৃণমূলের মহিলা কর্মাধ্যক্ষ কবিতা রায়েরা শহরের দুর্গাবাড়ি মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে হাজির হয়ে প্রার্থীদের নিয়ে এলাকায় প্রচারে ঝাঁপালেন। দল বেঁধে রাস্তায় নেমে গঙ্গারামপুরে দলের তরফে পর্যবেক্ষক প্রশান্ত মিত্রের নেতৃত্বে শাখা সংগঠনের কর্মী নেতারা প্রার্থীদের নিয়ে প্রচার তুঙ্গে তোলেন। তৃণমূল শিক্ষক সমিতিও দলের প্রার্থীদের সমর্থনে শহরে বিরাট মিছিল বের করেন।
বামেদের পক্ষে সেখানে বলার মতো ছিল কেবল একটি অটোর দুদিকে মাইকের চোঙ লাগিয়ে লাল পতাকা ঝুলিয়ে পাড়ায় পাড়ায় প্রচার। একটি মাত্র অটোতেই শহর জুড়ে প্রচারে সিপিএমের এই করুণ ছবিটা চাপা থাকেনি শহরবাসীর কাছেও। তবে লড়াইয়ের ময়দান থেকে কার্যত সরে যাওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি সিপিএম জেলা সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাস। তবে তৃণমূলের সেনাপতি তথা জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের দাবি, ‘‘ওদের সঙ্গে কোনও লোকজন নেই।’’ প্রকাশ্যেই তিনি বলেন, ‘‘যাদের নিয়ে সিপিএম এতদিন ভোট করাতো, তারা সবাই এখন আমাদের দিকে চলে এসেছেন।’’ বাড়ির দলীয় অফিসে বসে বিপ্লববাবুর ভাই শার্দুল মিত্রের দাবি, রোজই এলাকা থেকে দলে দলে লোকজন তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন।
কেননা, বিগত ২০ বছরে গঙ্গারামপুরে সিপিএম পুরবোর্ডে থেকে নাগরিক পরিষেবার কোনও উন্নতি করতে পারেনি বলে মানুষ তাদের পরিত্যাগ করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
হাইরোডে দলীয় কর্মী শূন্য কার্যালয়ে বসে সিপিএম সম্পাদক নারায়ণবাবু অবশ্য ওই অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেন, গঙ্গারামপুরে রবীন্দ্রভবন, পুণর্ভবা সেতু, স্টেডিয়াম, বাসস্ট্যান্ড, হাইস্কুল, পলিটেকনিক কলেজ রাস্তাঘাট, বাজার সবই বামফ্রন্টের সময়ে হয়েছে। এখন নীল সাদা রঙ করে তৃণমূলের সাফল্য বলে দাবি করা হচ্ছে।
আসলে এই পুরভোটে রাস্তা, জঞ্জাল, নর্দমা সাফাইয়ের মতো ছোট বিষয়ের মধ্যে আর আটকে নেই বলে নারায়ণবাবু দাবি করেন। তাঁর কথায়, পাড়ায় পাড়ায় ক্লাব সংস্কৃতির নামে সরকারি টাকা দিয়ে বেকার যুব সমাজকে বিপথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ভোট উপলক্ষে প্রতি রাতে এলাকায় পিকনিকের আসর বসানোর যে কুঅভ্যাস তৈরি করা হচ্ছে, তা থেকে আপনার ছেলেটাকে বাঁচাতে পারবেন তো? আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের এই কথা বলছি।’’ তাঁর কথায়, নাগরিক পরিষেবার বদলে বর্তমান শাসক দলের বিরুদ্ধে সিপিএমের ভবিষ্যৎ বাণী কাজে আসে কি না, তার জন্য আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।