পাহাড়ের কার্শিয়াং থেকে রোহিনী রোপওয়ে প্রকল্প। ছবি: স্বরূপ সরকার।
প্রায় এক দশক বন্ধ থাকার পরে নতুন করে কার্শিয়াঙের রোপওয়ে প্রকল্পের কাজ নতুন করে শুরু হতে চলেছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রকল্পটি শেষ করতে প্রয়োজনীয় নির্মাণ এবং বিদ্যুতের কাজের নতুন টেন্ডার ডিসেম্বর মাসের মধ্যে হয়ে যাবে। কাজ শেষ হলে, কার্শিয়াঙের পাশে গিদ্দাপাহাড় থেকে রোহিনী—২.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রোপওয়েটি উত্তরবঙ্গ তো বটেই, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় রোপওয়ে হবে। পাহাড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়াও পর্যটন শিল্পের দিক থেকে যা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য।
জিটিএ সূত্রের খবর, গত ২০১৪ সালে কাজ শুরু হয়ে টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রোপওয়েটি কার্শিয়াং শহরের পাশের গিদ্দাপাহাড় থেকে রোহিণী ট্যুরিজম কমপ্লেক্স অবধি তৈরি হচ্ছে। এতে পর্যটকেরা শুধু নয়, স্থানীয় বাসিন্দারাও দ্রুত কার্শিয়াং থেকে রোহিনী নেমে শিলিগুড়ি পৌঁছে যেতে পারবেন। অন্তত আরও ৬-৮ কোটি টাকা প্রকল্পটি শেষ করতে প্রয়োজন রয়েছে। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ
শুরুর পথে জিটিএ পর্যটন বিভাগ। ঠিক হয়েছে, কাজ শেষের প্রয়োজনীয় টাকা দেবে জিটিএ
প্রায় ১৬ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে ১৩ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। ২০১৪ সালে কলকাতার একটি এজেন্সি কাজটি শুরু করে। রাজ্য সরকার পর্যটন দফতরের মাধ্যমে টাকা এসেছিল। কিন্তু ২০১৪-’১৫ সালে প্রকল্পের ডিপিআর বা বিস্তারিত রিপোর্টে জিএসটি-র হিসাব ছিল না। সেই নতুন করে কাজ শেষ করতে প্রকল্পের বাজেটে ২৮ শতাংশ হারে জিএসটি ধরা হয়। তাতে প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৬ কোটি টাকা বেড়ে যায়। হাতে বরাদ্দ না থাকায় কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে থাকে।
বছরের গোড়ায় জিটিএ প্রধান অনীত থাপা বিষয়টি লিখিত ভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানান। এর আগে ২০২২ সালে পর্যটন দফতর এবং স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রধান সচিবদের জানানো হয়েছিল। সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষা শুরু হয়। এর মধ্যে পরিবেশগত ছাড়পত্রের কাজ এগিয়ে রাখা হয়। দার্জিলিঙের জেলাশাসকের কাছ থেকে বেশ কিছু গাছ কাটার অনুমতি নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। শেষে, সরকারের সঙ্গে বরাদ্দ নিয়ে আলোচনার পর এ বার কাজ শেষ করতে নতুন টেন্ডারে যাচ্ছেন জিটিএ কর্তৃপক্ষ। জিটিএ পর্যটন দফতরের এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর সোনাম ভুটিয়া বলেন, ‘‘রোপওয়ের কাজ নতুন করে শুরু হতে চলেছে। জিটিএ বরাদ্দ নিয়ে টেন্ডার করতে চলেছে। কাজ শেষ করে সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার পরেই রোপওয়ে চালু হবে।’’
পাহাড়ের সবচেয়ে পুরানো জনপ্রিয় রোপওয়ে দার্জিলিং শহরে রয়েছে। নর্থ পয়েন্ট থেকে সিংলা অবধি ২.৫ কিলোমিটার রোপওয়ে ১৯৬৮ সালের তৈরি। ১৯৯৮ সালে নতুন করে রোপওয়েটি সংস্কার করা হয়। ২০০৩ সালে দার্জিলিং রোপওয়ে তার ছিঁড়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। চার পর্যটক মারা যান। ১১ জন জখম হয়েছিলেন। পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৯ বছর পরে তা সংস্কার, ছাড়পত্রের পর চালু হয়। কার্শিয়াঙের রোপওয়ে পাহাড়ের দ্বিতীয়
রোপওয়ে প্রকল্প। চূড়ান্ত সতর্কতা মেনেই প্রকল্প চালুর ছাড়়পত্র দেওয়া হবে বলে ঠিক রয়েছে।