মিত্রসম্মিলনীতে কাঠামো পুজো। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
রথের দিন কাঠামো পুজো করে সূচনা হল শিলিগুড়ি মিত্র সম্মিলনীর ৯০ বছরের পুরনো দুর্গা পূজোর।
শুরুতে অবশ্য কাঠামো পুজোর রেওয়াজ ছিল না উদ্যোক্তাদের। ১৯২৭ সালে যখন পুজো শুরু হয় তখন প্রতিমা বানাতেন ব্যোমকেশ পাল। মিত্র সম্মিলনীর জায়গাতেই এক সঙ্গে চলত আরও কয়েকটি পুজোরও প্রতিমা তৈরির কাজ। মৃৎশিল্পীদের মধ্যে রথের দিন কাঠামো পুজোর যে রেওয়াজ রয়েছে সেটাই তখন মানা হত। গত এক দশক ধরে অবশ্য মিত্র সম্মিলনী ক্লাবের কর্মকর্তারাই এই কাঠামো পুজোর আয়োজন করে আসছেন।
সাধারণ সম্পাদক উদয় দুবের কথায়, ‘‘মিত্র সম্মিলনীর এই জায়গাটি ছিল সে সময় শিলিগুড়ির আইনজীবী সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের। চেনা পরিচিতদের নিয়ে অবসর বিনোদনের জন্য ক্লাবের সূচনা করেছিলেন। ১৯০৯ সালে শাল খুঁটি পুঁতে তার সূচনা হয়েছিল সরস্বতী পুজোর দিন। সংস্কৃতি চর্চাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষদের এক সঙ্গে চলার সূচনা তখন থেকেই।’’
এখনও তৃণমূল হোক অথবা কংগ্রেস, সিপিএম বা কোনও বাম শরিক দলের নেতা। শহরের অন্যতম প্রাচীন পুজোকে ঘিরে দলমত নির্বিশেষে সকলেই এক সঙ্গে মিলেমিশেই রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘যে বছর পুজো শুরু হয় তার আগে সুরেন্দ্রনাথবাবু তাঁর জায়গা মিত্র সম্মিলনী কমিটির হাতে তুলে দেন। সে সময় দুটি শর্ত দিয়েছিলেন। প্রতি বছর যেন দুর্গাপূজো এবং সরস্বতী পুজো হয়। তা হয়ে আসছে।’’
ব্যোমকেশবাবুর পর প্রতিমা বানাতেন তাঁর ছেলে কেষ্ট পাল। তার পর শিশু পাল। গত দশ বছর তিনিই বানিয়েছেন। এ বার বানাচ্ছেন শহরেরই আরেক মৃৎশিল্পী পুষ্প পাল। কাঠামো পুজোয় হাজির ছিলেন তিনিও। বলেন, ‘‘শহরের পুরনো পূজোর অন্যতম এই পুজো। এ বার এই পূজোর প্রতিমা বানানোর সুযোগ মেলায় আমি খুশি।’’
ক্লাবের সামনে পুজো মণ্ডপে প্রতিমা বানানো হয়। সেখানেই কংক্রিটের বেদীর পর কাঠামো পুজো হল এ দিন। ডাকের সাজের একচালা সাবেকী প্রতিমা। পূজোর আয়োজনের দিকটি মূলত দেখেন সামাজিক কমিটির সদস্যরা। সুরেন্দ্রনাথবাবুর নাতি তথা বর্তমান কমিটির অন্যতম সদস্য জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য জানান, শহরের এই পুরনো পূজোর আয়োজনকে ঘিরে তাঁরা কোনও খামতি রাখতে চান না। সব মিলে ক্লাবে প্রায় আড়াইশো সদস্য রয়েছে। সদস্যরা ছাড়াও স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দাদের অনেকেই চাঁদা দেন।