স্কুলের এক চিলতে জমিতেই সব্জি ফলাচ্ছেন ছাত্র-শিক্ষকেরা।—নিজস্ব চিত্র।
ছাত্রছাত্রী-শিক্ষকরা মিলেই ফলাচ্ছেন বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লঙ্কা ও টোম্যাটো। ওই দিয়েই রান্না হচ্ছে মিডডে মিল।
আলিপুরদুয়ার জেলার কামাখ্যাগুড়ির ১ পঞ্চায়েত এলাকার দক্ষিণ নারারথলি জুনিয়র হাইস্কুলে এমন ঘটনা রীতিমতো নজর কেড়েছে সকলের। ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রদীপ পণ্ডিতের উদ্যোগেই নিয়ম করে শিক্ষক ও সমস্ত ছাত্ররা কোদাল হাতে স্কুলের এক চিলতে ফাঁকা জমিতে চাষের কাজে নামছেন। সপ্তাহে অন্তত দু’দিন স্কুল ছুটির পর অথবা টিফিনের সময় কাজ করছেন তাঁরা। ওঁদের পরিচর্যায় ফসলও হয়েছে নজরকারা। এই ঘটনায় গর্বিত তাঁরা সকলেই।
স্কুলের ছাত্র সুশান্ত দাস, প্রকাশ দাস চিরঞ্জিৎ দাস, শুভঙ্কর দেবনাথদের কথায়, ‘‘নিজেরা পরিশ্রম করে সব্জি চাষ করে সেই সব্জি দিয়ে মিড-ডে খাওয়ার আনন্দই আলাদা। প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উৎসাহ না পেলে এ কাজ করতে পারতাম না।’’
প্রদীপবাবু জানান, ১৭ ডেসিমেল জমিতে ২০০৮ সালে এই স্কুল তৈরি হয়। স্কুল বাড়ি নির্মাণের পর আট ডেসিমেলের কিছু বেশি ফাঁকা জমি পড়ে রয়েছে দেখে তিনি নিজেই পাওয়ার ট্রেলর দিয়ে জমি চাষ করিয়ে গত বছর লঙ্কা ফলান। ভাল ফলন মেলে। ওই লঙ্কাই কয়েক মাস ধরে মিডডে মিলে ব্যবহৃত হয়। তিনি বলেন, ‘‘জমি এক বার চাষ করিয়ে নেওয়ার পর আমরা ও ছাত্রছাত্রীরা মিলেই সব্জি চাষ করছি। এর ফলে গত তিন মাস ধরে সব্জি কিনতে হয়নি। আরও অন্তত দেড় মাসের সব্জি খেতে রয়েছে। সব্জি কিনতে হচ্ছে না বলে মাঝে মাঝেই মাংসও খাওয়াতে পারছি।’’
শুধু সব্জি চাষ করেই নয়, ভাল পঠনপাঠনের পাশাপাশি নাচ, গান, নাটক ও আবৃত্তি-সহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও নজর কেড়েছে ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। প্রধান শিক্ষক রচিত ‘ক্ষুদ্র মশা জীবন নাশা’ নাটকে ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ভাল অভিনয় করায় বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক পাচ্ছেন বলেও জানান।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, এ বছর সাফল্য মেলায় আগামী বছর আরও আধা বিঘা জমি লিজে নিয়ে আরও বেশি করে বিশেষ করে আলু চাষ করতে চাই। এ বছর রাসায়নিক সার ব্যবহার হলেও আগামী সময়ে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করার ইচ্ছে রয়েছে। শিক্ষক বিমান মণ্ডল, তন্ময় নাথ ও শিক্ষিকা রমা মোছারি বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক উদ্যোগী না হলে এত সুন্দর সব্জি চাষ সম্ভব হতো না। অন্য স্কুলও আমাদের মতো ফাঁকা জমিতে সব্জি চাষ করুক সেটাই চাই।’’
এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য তথা কামাখ্যাগুড়ি ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পরিমল বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই স্কুলের ছাত্র ও শিক্ষকরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অন্য স্কুলগুলিকেও তা পথ দেখাতে পারে। ওই স্কুল আমাদের গ্রামের গর্ব।’’