বধূ হত্যার প্রতিবাদে পথে নাগরিকরা। নিজস্ব চিত্র।
এক বধূর রহস্যজনক মৃত্যুর বিচার চেয়ে উত্তাল কালিম্পং শহর। মোমবাতি মিছিল করে অভিযুক্তের শাস্তির দাবি জানাল সাধারণ মানুষ।
চলতি মাসের ২৭ তারিখ শিখা কুমারী প্রধান নামে কালিম্পঙের র্যালি রোডের বাসিন্দার রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয়। মৃতার বাপেরবাড়ির অভিযোগ, তাদের মেয়েকে খুন করেছে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। এ নিয়েই উত্তাল হয় এলাকা। অবিলম্বে দোষীদের শাস্তির দাবি করলেন স্থানীয়েরা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০২০ সালে কার্শিয়াঙের তিন ধারিয়ার রোশন কুমার গুপ্তের সঙ্গে বিয়ে হয় শিখার। তাঁর বাপের বাড়ির তরফে অভিযোগ, বিয়ের সময় রোশন সিকিমের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার কাজে যুক্ত ছিলেন। পরে সেই চাকরি ছেড়ে অন্য কোনও কাজ করতেন। আগেই শিখাকে বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দেওয়া হত। সম্প্রতি নির্যাতন বাড়ে। শিখার বাবা দিলীপ প্রসাদ বলেন, ‘‘বিয়ের পর থেকেই মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়। বিয়ের পরেও পণের দাবি করত। মেয়ে মাঝে কালিম্পঙে চলে এলেও আমরা আবার বুঝিয়ে তাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাই। এ ভাবেই চলছিল প্রায় এক বছর। কিন্তু পারিবারিক অশান্তির জেরে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়ত ও। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল। বেশ কিছু দিন চিকিৎসাও চলে।’’ একটু থেমে মৃতার বাবা আরও বলেন, ‘‘২৭ এপ্রিল মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে ফোন আসে। জানানো হয়, মেয়ে খুব অসুস্থ তাকে শিলিগুড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদেরও যেতে বলে। আমরা গিয়ে দেখি, মেয়ে মৃত!’’
এর পর শিখার শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে কার্শিয়াং থানায় খুনের মামলা দায়ের করেন বাপেরবাড়ির লোকজন। পরবর্তীতে সেই মামলা কালিম্পং থানায় স্থানান্তরিত হয়। শিখার দাদা বলেন, ‘‘বিয়ের সময় নগদ চার লক্ষ টাকা পণ দেওয়া হয়। বোনের শ্বশুরবাড়ির চাহিদা মতো সোনা দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও মন ভরেনি তাদের। আরও টাকা চাইত। চাহিদা শুধু টাকার। যার পরিণতি আমার বোনের মৃত্যু।’’
শনিবার সন্ধ্যায় শিখার মৃত্যু এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে কালিম্পঙের ডাম্বর চক এলাকা থেকে মোমবাতি মিছিল শুরু হয়। কালিম্পং থানার ত্রিকোণ পার্কের সামনে সেই মিছিল শেষ হয়। সেখানে মৌনী প্রতিবাদ জানান কালিম্পংবাসী। মিছিলে যোগদানকারী নয়নিতা গৌতম পরে বলেন , ‘‘শিখার হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি চাই। কালিম্পং পুলিশের কাছে অনুরোধ দ্রুততার সঙ্গে এই হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা হোক।’’ অন্য দিকে পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতার স্বামী রোশন কুমার-সহ ৪ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।