—ফাইল চিত্র।
লোকসভায় আজ সোমবার পেশ হল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। এ দিনই শিলিগুড়িতে এসে বিলের পক্ষে সওয়াল করে গেলেন বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়।
এনআরসি বিল নিয়ে সারা বাংলার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরবঙ্গের মানুষের স্পর্শকারতার কথা ভালই জানে বিজেপি নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতেই জিতেছিল বিজেপি। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ আলিপুরদুয়ারে নির্বাচনী জনসভায় এসে বলে গিয়েছিলেন এনআরসি হবেই। তিনি বলেছিলেন ‘‘অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াব।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখনও বলেছিলেন ‘‘এনআরসি হতে দেব না।’’ ভোটে জেতে বিজেপি। তবে তখনও অসমে এনআরসি হয়নি। অসমে তা হওয়ার পরে সারা রাজ্যের সঙ্গে সঙ্গে উত্তরবঙ্গেও তার প্রচণ্ড প্রভাব পড়ে। গোটা উত্তরবঙ্গের বহু পরিবারের সঙ্গে অসমের সম্পর্ক রয়েছে। কেউ অসমে বিবাহসূত্রে গিয়েছেন, কেউ অসমে চাকরি করতে গিয়ে সেখানেই থেকে গিয়েছেন। ওই রাজ্যে এনআরসি-র পরে দেখা যায়, অনেকের নামই বাদ পড়েছে। তাতে অনেকের রাতের ঘুম উড়ে যায়। তৃণমূল সেই সময়ই এনআরসি বিরোধিতা করে প্রচারে নামে। তার পরে রাজ্যের সাম্প্রতিক তিনটি উপ নির্বাচনেই তৃণমূল বিজেপিকে পরাজিত করেছে। বিজেপি নেতাদের অনেকেই তার পর থেকে এনআরসি প্রসঙ্গ সযত্নে এড়িয়ে যেতে চাইছিলেন। ঠিক উল্টো পথ ধরেছিলেন তৃণমূল নেতারা।
তবে সোমবার সংসদে অমিত শাহ নাগরিকত্ব বিল পেশ করার পরে ফের সেই প্রসঙ্গ আবার উঠে এসেছে বিজেপি নেতাদের মুখে। কৈলাস বিজয়বর্গীয় এ দিন প্রয়াত বিজেপি নেতা অভিজিৎ রায়চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখানেই তিনি দাবি করেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য এই বিল একান্ত জরুরি। বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারীরা এ রাজ্যের সুযোগ সুবিধা, চাকরি নিয়ে এখানকার মানুষকেই বঞ্চিত করছে। বিল পাশ হলে এ রাজ্যের বেকারদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।’’ যদিও তৃণমূলের দাবি, এ সব বলে মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে।
বিলটি পাশ হলে রাজ্যের মানুষ কোনওভাবেই বঞ্চিত হবেন না বলে দাবি করেছেন বিজয়বর্গীয়। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশি এ রাজ্যের এসে দেশের সুযোগ সুবিধা নিয়ে বসবাস করছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হলে আইনে সংস্কার হবে। তাতে এ রাজ্যের উপর থেকে জনসংখ্যার অনেকটাই চাপ কমবে। গতি পাবে উন্নয়ন।’’ তাঁর দাবি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে এ রাজ্যের বাঙালি বেকার যুবক-যুবতীরা চাকরির সুযোগ হারাচ্ছে কেবল অনুপ্রবেশকারীরা এখানে এসে ঘাঁটি গেঁড়ে বসেছে বলেই। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে থেকে বিদেশিরা এক প্রকার শোষণ করছে। তা হতে দেওয়া চলে না।’’ দার্জিলিং তৃণমূল জেলা সভাপতি রঞ্জন সরকার বলেন, ‘‘বিজয়বর্গীয় এ রাজ্য সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এ সব বলে মানুষের মধ্যে আরও বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছেন।’’
তবে উত্তর-পূর্ব ভারতেও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। সে প্রসঙ্গে বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘উত্তর-পূর্ব ভারতের স্থানীয়, তফসিলি জাতি উপজাতিভুক্ত মানুষ এর আওতায় আসবেন না। ওই সব রাজ্যগুলিতে আফগানিস্থান, পাকিস্থান এবং বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করার কথা ভেবেই এই বিল আনা হয়েছে।’’ তবে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এ দিন খড়্গপুরে বলেছেন, এনআরসি এবং নাগরিকত্ব বিল একই মুদ্রার এপিঠ, ওপিঠ। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘আসুন একজোট হই। এক জনকেও তাড়ানো চলবে না।’’