—প্রতীকী চিত্র।
পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে মামলা শুনতে ভুক্তভোগী গ্রামবাসীদের আদালতে ডেকে পাঠালেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবার জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে শিলিগুড়ির নকশালবাড়ির একটি গ্রামে পানীয় জল সরবরাহ সংক্রান্ত মামলা চলছিল। নকশাল নেতা কানু সান্যালের গ্রাম বলে পরিচিত নকশালবাড়ির সেবদৌল্লা জোতের কয়েক জন বাসিন্দা পানীয় জল পাচ্ছেন না বলে মামলা করেছিলেন সার্কিট বেঞ্চে। গ্রামের অধিকাংশই তফসিলি জাতি-উপজাতি পরিবারের। সোমবার সকালে প্রথমে মামলাটি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে উঠলে তিনি অভিযোগ শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে বিকেল ৩টের পরে, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের নির্বাহী বাস্তুকারকে আদালতে ডেকে পাঠান। বাস্তুকার আদালতে উপস্থিত হলে, বিচারপতি গ্রামের জল সরবরাহ দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থার দুই কর্তাকে আজ, মঙ্গলবার আদালতে ডেকে পাঠিয়েছেন। মামলাকারীদের আইনজীবী সন্দীপ মণ্ডলকে বিচারপতি বলেন, “গ্রামবাসীদেরও ডাকতে বলুন। কয়েকজন গ্রামবাসীকে কি আদালতে নিয়ে আসা যাবে?” আইনজীবী জানান, আনা যাবে। কেন গ্রামবাসীদের আদালতে উপস্থিত করাতে চাইছেন তা ব্যাখ্যা করে বিচারপতি বলেন, “রাষ্ট্র হিসেবে ভারতবর্ষ তাঁদের (গ্রামবাসীদের) ব্যাপারটা শুনছে। উপেক্ষা করছে না। এটা তাঁরা নিজেরা দেখুন, সেটাই চাইছি।”
আজ দুপুর ২টোয় মামলাটি ফের শুনবেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সে সময়েই গ্রামবাসীদের আদালতে থাকতে বলেছেন বিচারপতি। এই গ্রামটিকে ২০১৪ সালে তৎকালীন দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া ‘মডেল গ্রাম’ ঘোষণা করেছিলেন। তখনই জলের প্রকল্প মঞ্জুর হয় বলে দাবি। সোমবার শুনানিতে বিচারপতির ধমক খেয়েছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার কেশবচন্দ্র কুমার। নকশালবাড়ির সেবদৌল্লা জোতের বাসিন্দারা জল পাচ্ছেন কি না, এ প্রশ্নে নির্বাহী বাস্তুকার এক-এক বার এক-এক রকম উত্তর দেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বাস্তুকারকে প্রশ্ন করেন, “গ্রামবাসীরা জল পাচ্ছেন কিনা তা অফিসে বসে জানবেন কী করে?” জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বাস্তুকার আদালতে জানান, একটি বেসরকারি সংগঠন রয়েছে যারা গ্রামবাসীরা জল পাচ্ছেন কি না তা দেখভাল করে। ওই বেসরকারি সংগঠনের যে প্রতিনিধিরা গ্রামবাসীদের জলের সরবরাহ দেখভাল করেন তাঁদের নাম এবং মোবাইল নম্বর নথিভুক্ত করতে নির্দেশ দেন বিচারপতি। তিনি ওই দু’জনকেও মামলার সঙ্গে যুক্ত করে মঙ্গলবার আদালতে হাজিরা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারপতি বলেন, “দু’জন যদি না আসেন, তা হলে কড়া পদক্ষেপ হবে।”
মামলাকারীদের আইনজীবী সন্দীপ মণ্ডল বলেন, “কাগজেকলমে দেখানো হয়েছে, ওই গ্রামের ১৯৭টি পরিবার জল পায়। আসলে জল পায় মাত্র ১৪টি পরিবার। তা-ও সব সময়ে পায় না। শিক্ষা-খাদ্যের পরে, জল নিয়ে এটা বড় দুর্নীতি। আদালতে সব উন্মোচিত হবে।” জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার কিছু বলতে চাননি। সরকারি আইনজীবী বেদশ্রুতি বসু বলেন, “পানীয় জল সরবরাহের পরিকাঠামোর কাজ চলছে। আদালতে সব জানানো হয়েছে।”