ঘরের-মেয়ে: স্বপ্নাকে ঘিরে স্কুলের কচিকাঁচারা। ফাইল ছবি
এক কন্যাকে চলাফেরা করতে হয় হুইলচেয়ারে, কিন্তু ভারী ধাতব বল (শটপাট) আর বর্শা (জ্যাভলিন) নিয়ে বিশ্বজয়ে বার হয়ে পড়েছেন। আর এক কন্যা এক নম্বরে উঠেছেন ব্যাডমিন্টনের র্যাকেট হাতে। তৃতীয় কন্যার হেপ্টাথলনে এশিয়ার সেরা হওয়ার গল্প এখনও ঘুরছে এই রাজ্যে। এই তিন কন্যা, দীপা মালিক, পিভি সিন্ধু এবং স্বপ্না বর্মণের কাহিনি এ বারে জায়গা পাচ্ছে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্য বইয়ে। তিন জনের অদম্য জেদ, নিয়মানুবর্তিতা এবং পরিশ্রমের কথা ছোটদের বড় হতে উৎসাহী করবে, আশা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।
পাঠ্য বিষয়ের পরিমার্জন এবং পরিবর্তনের কাজে যে বিশেষজ্ঞ কমিটি রয়েছে, তাঁদের প্রতিনিধিরা জানান, পড়ুয়াদের সামনে ‘জীবন্ত কিংবদন্তী’ তুলে ধরতেই এই তিন জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘তিন মেয়ে লড়াই করে জীবনে বড় জায়গায় পৌঁছেছেন। এটা একটা দৃষ্টান্ত। পড়ুয়ারা তাতে উদ্বুদ্ধ হবে। আমাদের বাংলার মেয়ে স্বপ্নাও তাঁদের একজন। সে কারণেই পাঠ্যসূচিতে তিন জনের কাহিনি রাখা হয়েছে।’’
জলপাইগুড়ির প্রত্যন্ত ঘোষপাড়া গ্রামের মেয়ে স্বপ্না দারিদ্রের সঙ্গে কঠিন লড়াই করেছেন। বাবা রিকশাভ্যান চালক এবং মা চা বাগানের কর্মী। স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ৬ বছর ধরে বাবা শয্যাশায়ী। চার ভাইবোনের সংসারে অভাব নিত্য সঙ্গী। তার উপর প্রতিটি পায়ে ছটা করে আঙুল থাকায় জুতো পরতেও সমস্যা হত তাঁর। তবু নিজের স্বপ্ন থেকে সরেননি স্বপ্না। গত বছর এশিয়ান গেমসে হেপ্টাথলনে সোনা জেতেন তিনি।
হায়দরাবাদের মেয়ে পুরুসালা বেঙ্কট সিন্ধু ১৭ বছর বয়সে বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে ২০ নম্বর র্যাঙ্কে ঢুকে পড়েছিলেন। এ বছর তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতেন। আর হরিয়ানার মেয়ে দীপা মালিক প্যারাঅলিম্পিকে শটপাটে রুপো এনেছেন। দেশের প্রথম মহিলা ক্রীড়াবিদ তিনি এই সম্মান পেয়েছেন। দু’বছর পরে প্যারা অ্যাথলেটিক গ্রাঁপ্রিতে জ্যাভলিন ছোড়ায় পেয়েছেন সোনা। বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিনিধিরা জানান, অতি সাধারণ পরিবার থেকে কী ভাবে সাফল্যের চুড়োয় উঠতে হয়, পাঠ্যবইয়ের কাহিনিতে এক শিক্ষক পড়ুয়াদের সেই গল্প বলছেন। তাতেই উদাহরণ হিসেবে স্বপ্নার লড়াইয়ের কথা এসেছে। একই ভাবে সিন্ধু, দীপার সাফল্যের মূলে যে কঠোর পরিশ্রম আর নিয়ম মেনে চলার গল্প, তা-ও বলা হয়েছে ওই বইয়ে। পাঠ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের অন্যতম রাতুল গুহ বলেন, ‘‘পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজির পাঠ্যবই ‘ওয়ার্ক বুকে’ এই তিন জনের কাহিনি রাখা হয়েছে। এ বছর থেকে পড়ুয়ারা বইতে তা পাবে। সঙ্গে থাকছে তাঁদের নানা ছবিও।’’