ফাইল চিত্র
গত কয়েক বছরে ইউপিএ আমলের যে প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে দিতে চেয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার, এ বারে পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্যে তাকেই খড়কুটো হিসেবে ধরতে রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্র নির্মলা সীতারামন। ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণার শেষ দিনে এই বাবদ বাড়তি অর্থ বরাদ্দের কথাও জানান তিনি। কোটি কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের জন্য শুধু এইটুকু ঘোষণা নিয়ে যেমন সমালোচনা শুরু হয়েছে, পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, এত একশো দিনের কাজ তৈরি হবে কোথা থেকে?
রবিবার সকালে এই প্রকল্পে ৪০ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি বলেন, ‘‘সরকার ৮৫ শতাংশ ভাড়া, রেশন এবং খাবার দিয়ে পরিযায়ীদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করেছে। এ বার তাঁরা বাড়ি ফিরে ১০০ দিনের কাজ করবেন। স্থানীয়স্তরে কাজ তৈরির জন্য কেন্দ্র প্রকল্পের টাকাও বরাদ্দ করে দিল।’’
সরকারি সূত্রের খবর, আগামী একমাস পরিযায়ীদের জবকার্ড তৈরি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের প্রক্রিয়া করে কাজ দেওয়া হবে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে এ কাজ শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু ব্লকে ব্লকে কাজ শুরু হতেই বাস্তবে দেখা দিচ্ছে অন্য সমস্যা। কাজ থেকে লোক বেশি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাতে কে কতটা কাজ পাবেন, সেই কাজকে নির্ভর করে সংসার চলবে কি না, তা নিয়ে দেখা দিচ্ছে সংশয়। এই অবস্থায় কেন্দ্রের আর্থিক প্যাকেজ এবং ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তোলা শুরু করে দিয়েছেন বিরোধীরা।
রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেছেন, ‘‘কেন্দ্র প্রকল্পটি বন্ধ করতে চেয়েছিল। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী তা চালিয়ে গিয়েছেন। প্রয়োজনে আমাদের কোষাগার থেকে টাকা বরাদ্দ করা হয়। এখন সেই বিজেপি সরকারই আবার ১০০ দিনের কাজ নিয়ে আসছে।’’
সরকারি আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, দেশের প্রতিটি জেলার ব্লকে বা পঞ্চায়েত স্তরে জবকার্ডধারীদের তালিকা রয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতে তালিকাধারীদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাজ দেওয়া হয়। পরিযায়ীরা নতুনভাবে ওই তালিকায় ঢুকবেন। তাই কে কতটা কাজ পাবেন তার নিশ্চয়তা নেই। শহুরে এলাকায় পরিকাঠামো কিছু উন্নত থাকায় গ্রামীণ এলাকার থেকে আরও কম ১০০ দিনের কাজ হয়। নার্সারি, বাঁধের কাজ, পাথরের কাজ, কেঁচো সার তৈরির মতো নতুন প্রকল্প তৈরি করেও ৩৫-৪০ দিনের বেশি কাজ এগোয় না। নতুন প্রকল্প তৈরি না হলে কাজের দিন বাড়ানো মুশকিল হতে পারে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী দেশের প্রতিটি ব্লকে আলাদা করে পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি করার কথা জানিয়েছেন। আর প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে সংক্রামক রোগের ওয়ার্ড তৈরির কথাও বলেছেন। তবে তার জন্য বরাদ্দ এ দিন ঘোষণা করেননি। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রথীন বসু বলেছেন, ‘‘সরকার সবার কথা মাথায় রেখেই প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। রাজ্য সরকারকে কাজ করতে হবে।’’