—প্রতীকী চিত্র।
জলপাইগুড়িকে এ বার চালের জন্য হাত পাততে হবে অন্য জেলার কাছে। অন্তত সরকারি পরিসংখ্যানে এমন আশঙ্কাই হচ্ছে। ধান কাটা হয়েছে মাস কয়েক আগে। তার পরে, আলু বুনে সেটাও তোলা শুরু হয়ে গিয়েছে। এখনও সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে ধান জমা পড়েছে মাত্র ৫২ হাজার টনের কাছাকাছি। খোলা বাজারে ধান বিক্রিও শেষ। মার্চের প্রথম সপ্তাহের পরে, সরকারি কেন্দ্রেও ধান কেনার তেমন আবেদন নেই। অর্থাৎ, কেনার পরিমাণ এক লাফে বেড়ে যাওয়ার সুযোগও নেই। ফলে, তৈরি হয়েছে আশঙ্কা।
জেলায় প্রতি বছর রেশন বিলি থেকে মিড-ডে মিলের মতো প্রকল্পে জোগান দিতে প্রায় এক লক্ষ ৪২ হাজার টন ধান প্রয়োজন হয়। এই পরিমাণের অর্ধেকও এই জেলায় কিনতে পারেনি খাদ্য দফতর। ফলে, এমন হতেই পারে, জেলার প্রয়োজনের জন্য ধান আনতে হবে ভিন্ জেলা থেকে। অভিযোগ, সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে গেলে নিয়মের ‘ঝক্কি’ যেমন পোহাতে হয়, তেমনই অতিরিক্ত ‘ধলতা’ থেকে শুরু করে ধানের বস্তা চালকলের মিলে তুলে দিতেও খরচ দেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে। সে সবের সঙ্গেই এ বারে খোলা বাজারে ধানের দাম বেশি ছিল। সে সঙ্গে অসমেও ধানের চাহিদা ছিল বেশি। জলপাইগুড়ি জেলা থেকে ট্রাকে-ট্রাকে ধান অসমে গিয়েছে বলে দাবি কৃষকদের।
জলপাইগুড়ি লাগোয়া মোহিতনগরের গৌরীহাটে ধানের হাট বসে। সেই হাটেও ধান বিক্রি এখন পড়তি। ধান ব্যবসায়ী কনক সরকার বললেন, “এখন তো মাঠ থেকে আলু তোলা হচ্ছে। ধানের সময় শেষ। এখন আর বড় পরিমাণে ধানের লেনদেন হবে না। এ বার প্রচুর ধান অসমে পাঠিয়েছি।” ব্যবসায়ীদের দাবি, অসমে কুইন্টাল প্রতি ২,২০০ টাকায় ধান বিক্রি হয়েছে। যদিও সেই দাম প্রান্তিক কৃষকেরা পানি বলে দাবি। সে ক্ষেত্রে তাঁরা কেন সরকারি কেন্দ্রে এলেন না সে প্রশ্নও উঠেছে। জেলার খাদ্য নিয়ামক দাওয়া ওয়াঙ্গেল লামা বলেন, “এ বারে সরকারি কেন্দ্রে ধান বিক্রির প্রবণতা কমেছে। আমরা সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি, যাতে ধান কেনার পরিমাণ বাড়ে।” কৃষকের ঘরের ধান ফুরিয়ে গেলে কোথা থেকে সরকারি ধান কেনার পরিমাণ বাড়বে, প্রশ্ন রয়েছে প্রশাসনের অন্দরে।
বিজেপির কৃষক নেতা নকুল সরকার বলেন, “সরকারি ধান কেনার কেন্দ্রগুলি ফড়ে ও ব্যবসায়ীদের আখড়া, সেখানে সাধারণ কৃষকেরা যান না। তাঁরা বাধ্য হয়ে কম দামে ধান বিক্রি করেন। ফলে, চালের সঙ্কটও তৈরি হতে পারে জেলায়।” তৃণমূলের কৃষক সংগঠনের সভাপতি দুলাল দেবনাথ বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মতো ন্যায্য মূল্যে ধান আর কোনও রাজ্য কেনে না। বিজেপি যতই অপপ্রচার করুক, সে মিথ্যা সত্য হবে না।”