বেপরোয়া: পুলিশের সামনেই। আলিপুরদুয়ারে। ছবি: নারায়ণ দে
দু’বছর আগের কথা এখনও মনে গেঁথে রয়েছে প্রাঞ্জলের। একেবেঁকে তিরগতিতে ছুটে আসা ম্যাক্সি ক্যাবের ধাক্কায় ছিটকে পড়েছিল সে। রক্তে ভেসে গিয়েছিল পিচ রাস্তা। তখন প্রাঞ্জলের নবম শ্রেণি। দু’মাস নার্সিংহোমে ভর্তি থাকতে হয় তাঁকে। মস্তিস্কের হাড়ে আঘাত লেগেছিল। প্রাঞ্জল এখনও রাস্তা দিয়ে ভয় নিয়েই চালচল করে। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা একাদশ শ্রেণির ছাত্র প্রাঞ্জল দত্ত শনিবার বলল, “বাংলাদেশের কথা শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারছি না। খুব ইচ্ছে করছে আমরাও পড়ুয়ারা একসঙ্গে রাস্তায় নামি।”
জলপাইগুড়ি শহরের পরে বেপরোয়া গাড়ির সবথেকে দাপট ধূপগুড়িতে। গত দু’মাসে ট্রাকের ধাক্কায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে ধূপগুড়িতে। গত তিনমাসে তিনটি বাইক দুর্ঘটনা হয়েছে। তাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও জুলাই মাস থেকে এখনও পর্যন্ত বড়সড় বাইক দুর্ঘটনা হয়নি। ধূপগুড়ি ট্রাফিক পুলিশের দাবি, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নিয়ে প্রচার চালানোয় কিছুটা হলেও কমেছে বাইক দুর্ঘটনার সংখ্যা। তবে তাতে থামেনি বেপরোয়া বাইক চালকদের দাপট। মদ্যপ অবস্থায় বাইক চালানোর অপরাধে গত তিনমাসে মোট ৬৬ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। ট্রাফিক আইন ভাঙায় ওই তিনমাসে লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত হয়েছে মোট ৩৯ জনের। এ ছাড়াও ছোটখাটো ভুলের ক্ষেত্রেও জরিমানা করা হয়েছে আরও বেশ কয়েকজনকে।
ধূপগুড়িতে তিনটির মধ্যে দুটি দুর্ঘটনায় ট্রাক চালকরা নিজেরাই পুলিশের কাছে এসে আত্মসমর্পণ করেছেন। ওই দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে দুটি গভীর রাতে ঘটলেও একটি ঘটনা ঘটে ১ অগস্ট দুপুর বারোটা নাগাদ। একেবারে ধূপগুড়ি শহরের মূল রাস্তায়। গ্যাস ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় বাইক থেকে ছিটকে পড়ে ট্যাঙ্কারের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান এক গৃহবধূ। দুর্ঘটনার পর ট্যাঙ্কারের চালক পালিয়ে গেলেও পরে পুলিশের কাছে নিজেই ধরা দেন ট্রাক চালক। অন্য একটি দুর্ঘটনায় ধূপগুড়ি ওভারব্রিজের কাছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এক ভবঘুরে মহিলাকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায় ট্রাক। জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি জানিয়েছেন, সচেতনতা নিয়ে ক্রমাগত প্রচার চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলার এক পুলিশ অফিসারের কথায়, ‘‘রাত আটটার পর ট্রাফিক হালকা হতেই শহরে দাপট বাড়ে বাইক চালকদের। তবে বেপরোয়া বাইক চালকদের আটকাতে অন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।’’