সিবিআই ২০১৪ সালের টেট প্রার্থীদের তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে। — ফাইল চিত্র।
২০১৪ সালের ‘টেট’ দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত সকলের মোবাইল নম্বর চাইছে সিবিআই। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কাছে সিবিআই যে সব তথ্য চেয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে নিয়োগ হওয়া সকলের যোগাযোগের নম্বর।
উত্তরবঙ্গের এক-একটি জেলায় গড়ে অন্তত এক হাজার করে শিক্ষক-শিক্ষিকা চাকরি পেয়েছেন ওই সময়। সকলের যোগাযোগের নম্বর সিবিআই কেন নিজেদের কাছে রাখতে চাইছে, তা নিয়ে নানা চর্চা শুরু হয়েছে। আমলাদের একাংশের দাবি, এর অর্থ হল, ভবিষ্যতে যোগাযোগের সম্ভাবনা রেখে দেওয়া।
জেলাগুলির শিক্ষা দফতরের এক সূত্রের দাবি, সমস্যা তৈরি হয়েছে অন্যত্র। নিয়োগ হওয়া সকলের তালিকা চেয়েছে সিবিআই। কিন্তু সেই তালিকা জেলায় রয়েছে কি না, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। ২০১৪ সালের ‘টেট’-এর পরে কোনও জেলাতেই নিয়োগের তালিকা টাঙানো হয়নি বলে অভিযোগ। কাদের নিয়োগ করা হবে, রাজ্য থেকে সরাসরি সংসদের চেয়ারম্যান বা কর্তা-ব্যক্তিদের কাছে সে সব নাম পাঠানো হয়েছে।তাতে সই, সিল কিছুই ছিল না বলে দাবি।
নিয়োগ মামলায় রাজ্যের বেশ কিছু জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কর্তা-ব্যক্তিদের নিয়োগের নথি-সহ ডেকে পাঠিয়েছে সিবিআই। তার মধ্যে জলপাইগুড়ি-সহ উত্তরের সব জেলাই রয়েছে। সিবিআইয়ের নোটিসের পরে, রাজ্যের শিক্ষা দফতরের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করে জেলায় জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান, স্কুল পরিদর্শকদের সিবিআইকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান লৈক্ষ্যমোহন রায় বলেন, “নিশ্চয় সহযোগিতা করা হবে। আমরা নিজেরা আলোচনা করে ঠিক করব, কী ভাবে পদক্ষেপ করা হবে।”
কিন্তু সিবিআই যে সব তথ্য চেয়েছে তার অনেক কিছুই সংসদের কাছে নেই বলে দাবি। সিবিআই জানতে চেয়েছে, নিয়োগ হওয়া সকলের নাম, ‘টেট’-এর রোল নম্বর, বাবার নাম, জন্ম তারিখ, পরীক্ষায় তাঁর শ্রেণি বিন্যাস, প্রথম যোগ দেওয়া স্কুলের নাম, এখনকার স্কুলের নাম, বর্তমানে তাঁর চাকরির অবস্থা কেমন এবং যোগাযোগের নম্বর। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদেরর এক আধিকারিকের দাবি, নিয়োগ যাঁদের হয়েছে তাঁদের সম্পর্কে এত খুঁটিনাটি তথ্য এক লপ্তে মেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সে ক্ষেত্রে জেলা থেকে ফের নির্দেশিকা জারি করে সব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ডেকে নিয়ে তথ্য নিতে হবে। তবে যদি সিল ও সই দেওয়া নিয়োগের তালিকাই না থেকে থাকে, তা হলে তা সিবিআইয়ের কাছে পেশ করা হবে কী করে তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। জেলাশাসক এস পুন্নমবলম বলেন, ‘‘যাঁদের নিজস্ব মোবাইল নম্বর রয়েছে সেগুলিকে আগে যুক্ত করার কাজ হবে। আস্তে আস্তে বাকিও হবে।’’
বামপন্থী প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক বিপ্লব ঝার দাবি, “সংসদের কাছে নিয়োগের কোনও তালিকাই নেই। নজিরবিহীন ভাবে কোনও তালিকা তৈরি না করে শুধু মৌখিক নির্দেশে নিয়োগ হয়েছিল। এ বার সিবিআইকে জমা দিতে হলে হয় পরের তারিখে তালিকা দিয়ে হবে, নয় যে তালিকা দেওয়া হবে, তা পুরোপুরি সত্য নয়।”
সূত্রের দাবি, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ থেকে তালিকা নিয়ে যে প্রতিনিধি নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের কাছে যাবেন, তাঁর বয়ানও নথিবদ্ধ করবে সিবিআই।