প্রতীকী ছবি।
আনন্দের স্মৃতি মানুষকে যেন পুনরুজ্জীবিত করে। তাই আজ সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধনের প্রাক্কালে জীবন সায়হ্নে এসে আবেগে আপ্লুত হয়ে স্মৃতির গভীরে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়ে আনন্দ পাচ্ছি।
মনে আছে, হঠাৎ বিমল হোড়ের টেলিফোন এল। তিনি জানালেন, জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ হওয়ার দাবিতে জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন আন্দোলন শুরু করছে। আলিপুরদুয়ার বার অ্যাসোসিয়েশনও যেন তাঁদের সঙ্গে এই আন্দোলনে সামিল হয়। শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনও তাদের শহরে সার্কিট বেঞ্চের দাবিতে আমাদের সমর্থন চেয়েছিল। কিন্তু আমরা দাঁড়াই জলপাইগুড়ির পাশে।
এ বার আন্দোলনে নামার পালা।
আমি ছিলাম আলিপুরদুয়ার বার অ্যাসোসিয়েশনের তরুণ সদস্য। ভোরবেলায় বাসে করে জলপাইগুড়ি হাজির হতাম। বিমানদা, বিদ্যুৎ, বিমল হোড়, গৌতম দাস ও অন্যদের নিয়ে জলপাইগুড়ির মোড়ে মোড়ে পথসভা করেছি। প্রথম দিকে সবাই আমাদের দেখে বলতেন, “এরা আবার আন্দোলন করে কী করবে?” কিন্তু আমাদের আন্দোলন কখন যে গোটা উত্তরবঙ্গের আন্দোলন হয়ে উঠল, সেটা কেউই বুঝতে পারেননি।
আমার জলপাইগুড়িতে যাওয়াটা যেন একটা নিত্যনৈমিত্যিক রুটিন হয়ে উঠেছিল। আমাদের আন্দোলন প্রায় সব রাজনৈতিক দল সমর্থন করেছে। আমার মনে আছে, জলপাইগুড়ি বাস স্ট্যান্ডে নেমে রিকশা নিয়ে তিস্তার পাড়ে জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনে যখন যেতাম, রিকশাওয়ালা পরম আগ্রহে জিজ্ঞাসা করত, “স্যার, সার্কিট কোর্ট হবে তো?” আমি বলতাম, তাতে তোমার কী এসে যায়? উত্তর পেতাম, “বাইরে থেকে কত লোক আসবে। আমার রিকশার সাওয়ারি হবে। আমার রোজগার বাড়বে।” তখনই বুঝলাম, এই আন্দোলন মানুষের মনকেও স্পর্শ করেছে৷ এই আন্দোলন গণ আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে৷
সেই সময়ে কোথায় সার্কিট বেঞ্চ হবে, তা নিয়ে বিচার বিবেচনা করতে হাইকোর্টের দু’জন বিচারপতি এসেছিলেন শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি পরিদর্শন করতে। আমরা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম৷ কারণ, সব দিকের বিচারে জলপাইগুড়ির থেকে অনেক এগিয়ে শিলিগুড়ি।
এই পরিস্থিতিতে বিচারপতিরা যখন এলেন, সমস্ত জলপাইগুড়িবাসী ফুলের ডালা, শঙ্খ, চন্দন নিয়ে অভ্যর্থনা করল তাঁদের। চোখের জলে, শঙ্খধ্বনিতে, ফুলের মালায় বিচারপতিদের বরণ করা হয় সে দিন। ফিরে গিয়ে তাঁরা জলপাইগুড়ির নাম সুপারিশ করেন।
এর পরে অপেক্ষা। যদিও এই অপেক্ষার ইতিহাসে জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন আর কাউকে ডাকেনি। তাই আমরা ব্রাত্য থেকে গেলাম। যাই হোক, সব ভাল যার শেষ ভাল। আগামী ৯ মার্চ জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন হতে চলেছে। এটা উত্তরবঙ্গবাসীর কাছে বিরাট পাওয়া। এর ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবেন।