কাজে: বিড়ি বাঁধছে সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া প্রিয়া সাহা। নিজস্ব চিত্র
বিড়ির ডালি থেকে মুখ তুলে ঘড়িতে চোখ একরত্তি মেয়েটার। ঘড়ির কাঁটা ১০টা ছুঁতেই গতি বাড়ে হাতের। হাত চালিয়ে এক হাজার বিড়ি বাঁধতে পারলেই মিলবে নগদ ১৩৫ টাকা, জানাল হবিবপুরের বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া প্রিয়া সাহা। বলল, “৯০০ বিড়ি বাঁধা হয়ে গিয়েছে। এক হাজার বিড়ি হয়ে গেলেই কারখানায় গিয়ে জমা দেব। স্কুল, টিউশন না থাকায় সারা দিনে এক হাজার বিড়ি বাঁধতে অসুবিধে হচ্ছে না।”
প্রিয়ার মতোই হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডী পঞ্চায়েতের ইংলিশ গ্রামের স্কুল পড়ুয়া অনেক মেয়েই এখন বিড়ি শ্রমিক। কারণ, গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই দিনমজুর। কাজের সন্ধানে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন বাড়ির পুরুষেরা। আর মেয়েরা সংসার সামলে বাঁধেন বিড়ি। স্কুল, টিউশন না থাকায় মায়েদের সঙ্গী এখন পড়ুয়ারা মেয়েরাও। বিড়ি শ্রমিকদের মতোই এখন হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডী, আইহো বাজার থেকে শুরু করে পুরাতন মালদহের সাহাপুর, গাজল, বৈষ্ণবনগর, সর্বত্রই আনাজ, মাছ বাজারেও চোখে পড়ছে বিক্রেতার ভূমিকায় ছোট ছোট মুখ। কেউ ষষ্ঠ শ্রেণির, কেউ সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া।
বুলবুলচণ্ডী বাজারের কিশোর মাছ বিক্রেতা বিক্রম হালদার জানায়, “অনেক ক্রেতা মাছ কেটে চান। বাবার পক্ষে একা তা সম্ভব হয় না। বাবার মাছ বিক্রি কিছুটা কম হয়। আর স্কুল, টিউশন না থাকায় আমি বাড়িতেই রয়েছি। আমি বিক্রি করছি, বাবা মাছ কেটে দিচ্ছেন।”
করোনা আবহে প্রায় দু'বছর ধরে বন্ধ শিক্ষাঙ্গন। ফলে পড়াশোনা থেকে দূরে গিয়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বহু সাধারণ পরিবারের ছাত্র-ছাত্রী। পুজোর পরে স্কুল খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার। এখন রোজগারে যুক্ত খুদে পড়ুয়াদের ফের কী ভাবে স্কুলমুখী করা যায় তা নিয়েই চিন্তায় শিক্ষা দফতরের কর্তারা। এক শিক্ষক বলেন, “বহু ছেলে-মেয়ে কাজ করে এখন সংসার সামলাচ্ছে। তাদের ফের স্কুলমুখী করতে হলে পড়ুয়াদের দুয়ারে পৌঁছতে হবে” বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা দফতরের কর্তারা।