—ফাইল চিত্র।
অসম পায় বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকা। আর বাংলার জন্য বরাদ্দ সাকুল্যে চার কোটি। বরাদ্দে এই বৈষম্যের এই সংখ্যাতত্ত্ব সামনে রেখেই আজ বাজেটে চোখ রাখছে উত্তরবঙ্গের ক্ষুদ্র চা চাষিদের।
সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ছোট ছোট চা বাগানগুলিই এখন উৎপাদনে বড়গুলিকে পিছনে ফেলছে। চা পর্ষদও ছোট বাগানের চায়ের গুণমান বাড়াতে নানা পদক্ষেপ করেছে। চা নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতি তৈরিতে ছোট বাগানের জন্য পৃথক সংস্থানও রাখছে চা পর্ষদ। দেশের মধ্যে অসম এবং উত্তরবঙ্গেই ছোট চা বাগানের সংখ্যা বেশি। কিন্তু উত্তরবঙ্গের চা উৎপাদকদের অভিযোগ, বাজেট বরাদ্দের ৭৫ শতাংশই অসমে চলে যায়। উত্তরবঙ্গ মাত্র ২৫ শতাংশ বরাদ্দ পায়।
সম্প্রতি চা পর্ষদ উত্তরবঙ্গের ছোট বাগানগুলির জন্য মরসুম পরিবর্তন তহবিল (গরম বা ঠান্ডার তীব্রতায় চা গাছের ক্ষতিপূরণ) বরাদ্দ করেছে। অসমে আগে থেকেই ওই তহবিল দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি। উত্তরবঙ্গের ছোট চা বাগান সংগঠনগুলির দাবি, অসমের নিরিখে বঞ্চিত হওয়ায় গুণগত মানে পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। যার প্রভাব সরাসরি পড়েছে বাজারে। কেন্দ্রের নীতির জন্যই বারবার অসমের কাছে উত্তরবঙ্গের ছোট বাগানকে হারতে হচ্ছে বলে দাবি।
অসমকে বেশি বরাদ্দের পিছনে রাজনীতিও দেখছেন চা বাগানের নেতারা। তৃণমূলের চা সংগঠনের নেতা স্বপন সরকারের অভিযোগ, “অসম বিজেপি-শাসিত রাজ্য। সেই কারণে কেন্দ্রের দাক্ষিণ্য বেশি। উল্টে রাজনৈতিক কারণে পশ্চিমবঙ্গের ভাগও কমিয়ে দিয়েছে।”
চা পর্ষদের এক শীর্ষকর্তা অবশ্য বলেন, “উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি। সেই নীতি চা পর্ষদকেও মানতে হচ্ছে। তার ফলেই ছোট বাগানগুলিকে বরাদ্দ করলে অসমে বেশিটা চলে যায়। অর্থমন্ত্রী বাজেটে অন্য নীতি ঘোষণা করলে সেটাই মানা হবে।”
বাজেটের দু’দিন আগে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে পর্ষদ। দেখা যাচ্ছে, ২০১৮-’১৯ আর্থিক বছরে এ রাজ্যে ৩৯৪০ লক্ষ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ২১৫০ লক্ষ কেজি ছোট বাগানের। গতবার রাজ্যে মোট উৎপাদিত চায়ের ৫৪ শতাংশই ছোট বাগানের। তারপরেও কেন ছোট বাগানগুলি বঞ্চিত, প্রশ্ন শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকেরই। পর্ষদের দাবি, অসমের ছোট বাগানের উৎপাদন উত্তরবঙ্গের থেকে বেশি।
ছোট বাগানগুলির সর্বভারতীয় সংগঠন সিস্টা-র সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তীর যুক্তি, “অসম থেকে আগে থেকেই বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে, তার ফলে ওদের উৎপাদন বেশি হচ্ছে। আমরা সেই সুযোগটাই পাচ্ছি না।’’