সুশান্তর পড়ার টেবিল। নিজস্ব চিত্র।
বুধবার দুপুর। হাট করে খোলা বাড়ির দরজা। দরজার পাশের ঘরেই অগোছালো টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ষাটোর্ধ্ব এক মহিলা। টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বইখাতা। পাশেই রাখা সিরাপ (ওষুধ) ও আঠা (যে আঠা দিয়ে নেশাও হয় বলে দাবি খোদ পুলিশের একাংশের)। পুরাতন মালদহের খনি বাথানি গ্রামের বাড়িতে থাকলে এই টেবিলে বসেই পড়াশোনা করত সুশান্ত চৌধুরী, বহরমপুরে কলেজ ছাত্রী খুনে মূল অভিযুক্ত।
সুশান্তের পড়ার টেবিলের মতোই ফেসবুকের দেওয়ালে তার ভিডিয়ো, ছবি পোস্টের বিষয়টিও ভাবাচ্ছে পুলিশ, মনোবিদদের। পুলিশের দাবি, সমাজমাধ্যমে প্রতিহিংসার একাধিক ভিডিয়ো পোস্ট রয়েছে। এমনকি, নিজের হাতে মোবাইল ভেঙে ফেলে সেই ছবিও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে সুশান্ত। এক আত্মীয় বলেন, “সুশান্ত দিনের পর দিন স্নান করত না। ঠিক মতো খাবারও খেত না। স্নান করার কথা বললেই মেজাজ হারিয়ে ফেলত সে। এমনকি, নিজের মায়ের প্রতিও মেজাজ হারিয়ে ফেলত।”
পুলিশকর্তাদের কেউ কেউ জানান, নেশার কারণে এমন আচরণ করে থাকতে পারে সুশান্ত। পুলিশের এক কর্তা বলেন, “শুকনো নেশায় (ব্রাউন সুগার) আচ্ছন্ন হলে নেশাগ্রস্তদের স্নানে অনীহা আসে। মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। খাবার খেতে চায় না।” পুলিশ তাই সুশান্তের মাদক যোগ খতিয়ে দেখছে। ওই পুলিশকর্তার দাবি, সুশান্তের ফেসবুক দেখলেই বোঝা যাবে, কী ভাবে সে প্রকারান্তরে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছে ছাত্রীটিকে।
সুশান্ত এখন বহরমপুরে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। ছেলের জন্য বহরমপুরে যাওয়া তো দূরের কথা, বাড়িতেই কার্যত থাকছেন না পরিবারের সদস্যেরা। এ দিনও শিলিগুড়িতেই রয়েছেন সুশান্তের বাবা, কমিশনারেটের পুলিশকর্মী নিখিল চৌধুরী। ছেলের কাণ্ডে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন মা পরমেশ্বরী। বাড়ি ছেড়ে প্রতিবেশী, আত্মীয়ের বাড়িতেই সময় কাটছে তাঁর। মাঠে-ঘাটে দিন কাটছে সুশান্তের দুই ভাইয়ের। স্কুল পড়ুয়া এক ভাই জানায়, “দু’দিন ধরে মা কুটোটা কাটেনি। বাড়িতে রান্নাও হয়নি।” ছেলের পাশে কি পরিবার নেই? সুশান্তদের আত্মীয় পম্পা চৌধুরী বলেন, “আমরা সবাই দিশেহারা। কী করব, মাথায় ঢুকছে না। তবে অবশ্যই আমরা বহরমপুর যাব।” নিখিল বলেন, “ছেলের এই কাজ নিয়ে কারও সঙ্গে কিছু আলোচনাও করতে পারছি না।”