দলের অফিসে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে মজিবরকে (হলুদ গেঞ্জি)। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল বরখাস্ত করেছিল কোচবিহারের পানিশালার অঞ্চল তৃণমূল নেতা মজিবর রহমানকে। শনিবার আইএনটিটিইউসি তাঁকে শ্রমিক সংগঠনের অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব দেয়। ফুলের মালা দিয়ে অভ্যর্থনাও জানানো হয় তাঁকে। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই আবার জানানো হয়, ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল মজিবরকে। আর তা নিয়েই গুঞ্জন তৈরি হয়েছে রাজ্যের শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, ‘‘ওই বিষয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। প্রথমে দায়িত্বে দিলেও পরে তা বাতিল করা হয়।’’ আইএনটিটিইউসির কোচবিহার জেলা সভাপতি পরিমল বর্মণ বলেছেন, ‘‘বরখাস্তের তালিকায় মজিবর রহমানের নাম ছিল। পরে তা বলে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য ছিল। সে জন্যেই তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে আবার জানতে পেরেছি, এখনও তিনি বরখাস্ত। তাই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।’’ মজিবরের কথায়, ‘‘পুরো বিষয়টি দলের। আমাকে কেন বরখাস্ত করা হয়েছিল তা নিয়ে আমার কিছু জানা নেই। আবার কেন দায়িত্ব দেওয়া হল, কেনই বা সরিয়ে দেওয়া হল তা নিয়ে আমরা কিছু জানা নেই। আমার কোনও মতামত নেই।’’
নাটাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়েছে পানিশালা অঞ্চল। ওই অঞ্চলে তৃণমূলের মজবুত সংগঠন। দীর্ঘদিন ধরে ওই অঞ্চলে রাজ্যের শাসক দলের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দলও রয়েছে। এক সময়ে মজিবর ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সময়ে পানিশালায় দলের হয়ে শেষ কথা বলতেন মজিবর। তাঁর দাপটে বিরোধীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। শাসক দলের অনেকের মধ্যেই মজিবরের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তাঁকে সরাসরি কিছু বলার সাহস ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে মজিবরের দাপট হারিয়ে যায়। অন্য গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে। গত জানুয়ারি মাসে ওই এলাকায় নতুন করে গোষ্ঠীকোন্দল শুরু হয়। এ বার মূল তৃণমূলের সঙ্গে যুব তৃণমূলের। অভিযোগ, যুব তৃণমূলের একটি বৈঠকে বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে। পরে এক যুব নেতাকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানোর অভিযোগও ওঠে। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। ওই ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ নেয় দল। দলের কোচবিহার জেলাসভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক পানিশালের পাঁচ জন তৃণমূল নেতাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বরখাস্ত করেন। তার মধ্যেই এক জন মজিবর রহমান। মজিবর ও তাঁর অনুগামীরা অবশ্য দাবি করেন, তাঁরা কোনও কোন্দলের মধ্যে ছিলেন না।
শনিবার ওই মজিবরকেই শ্রমিক সংগঠনের অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব দেন আইএনটিটিইউসির কোচবিহার জেলা সভাপতি পরিমল বর্মণ। আইএনটিটিইউসির জেলা পার্টি অফিসেই তাঁর হাতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলে দেওয়া হয়। তার পরেই শুরু হয় বিতর্ক। অভিযোগ, পানিশালার বাকি বরখাস্ত নেতাদের নিয়েও বৈঠক করেছেন স্থানীয় নেতৃত্বদের একাংশ। এই অবস্থায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মজিবরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তৃণমূলের কোচবিহার ১ (বি) ব্লকের সভাপতি আব্দুল কাদের বলেন, ‘‘দলীয় নির্দেশ সবাইকে মেনে চলতে হবে। দলের নির্দেশের বাইরে যাঁরা কাজ করার চেষ্টা করছেন তাঁদের বিষয়টি জেলা নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে।’’