হাসিমুখে: পাশাপাশি থাকার বার্তা দিলেন দু’জনেই, আপাতত।
মুখোমুখি আলাপে দু’জনে কখনও হাসছেন, কখনও গম্ভীর মুখে আলোচনা করছেন। তা হলে কি সম্পর্কের বরফ গলছে? টক্কর ক্রমে সহযোগিতায় বদলাচ্ছে? তা হলে কি সদ্য় দল থেকে বহিষ্কৃত বিতর্কিত নেতার প্রভাবকে সামাল দিতেই এই কাছাকাছি আসা? হাসিতেই এর জবাব দিচ্ছেন দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূলের দুই ওজনদার নেতা, বিপ্লব মিত্র এবং গৌতম দাস। আলোচনার সূত্রধর আনন্দবাজারের প্রতিবেদক নীহার বিশ্বাস ও চিত্রগ্রাহক অমিত মোহান্ত। আজ দ্বিতীয় তথা শেষ পর্ব।
প্রশ্ন: বিপ্লবদা বর্ষীয়াণ নেতা। অনেক নির্বাচন করেছেন। তুলনায় আপনি (গৌতম) নবাগত। জেলা সভাপতি হিসেবে আসন্ন বিধানসভা ভোটে এই প্রথম আপনি নেতৃত্ব দিতে চলেছেন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আপনি কিভাবে বিপ্লবদার সঙ্গে কাজ করবেন?
গৌতম: বিপ্লবদা মাথার উপরে আছেন। আমি দিনে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা ছুটবার জন্য তৈরি। বিপ্লবদার পরামর্শ আমার প্রয়োজন। আমাদের কথাও হয়। আমার সঙ্গে বিপ্লবদার যোগাযোগ সব সময় ছিল, আছে, থাকবে। তাই আমার মনে হয় কাজ করতে সমস্যা হবে না।
প্রশ্ন: তাহলে কি আপনাদের দুজনের সম্পর্কের ‘বরফ’ গলছে?
গৌতম: না, না এসব একেবারেই ঠিক কথা নয়। ভুল ব্যাখ্যা। বরফ কোনও দিনই ছিল না। তাই গলার প্রশ্নও নেই। কিছু মানুষ অতি উৎসাহী হয়ে এইসব বলছে।
প্রশ্ন: ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে গৌতম দাস জোটের হয়ে কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন। শোনা যায়, সেই সময় আপনার (বিপ্লব) প্রচ্ছন্ন হাত ছিল গৌতম দাসের জয়ের পেছনে। এখন সেই গৌতম আপনাদের দলের জেলা সভাপতি। এবারও যদি গৌতম গঙ্গারামপুরের প্রার্থী হন তাহলে তাঁকে জেতাতে আপনার সহযোগিতা কি গৌতম পাবেন?
বিপ্লব: সেই সময় আমাদের প্রার্থী ছিলেন সত্যেন রায়। সত্যেন ভোটে দাঁড়ানোর পরে আমাদের বিপক্ষে অর্থাৎ বাম-কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কথা না বলে আমার বিরুদ্ধেই সমানে বলে গিয়েছেন, বক্তৃতাও দিয়েছেন। যত আমার বিরুদ্ধে বলেছেন, তত ওঁর ভোট কমেছে। এখানে আমার কিছু করার ছিল না। ওঁর কাজে এলাকার মানুষও ক্ষুব্ধ ছিল। অন্য দিকে, গৌতম কংগ্রেসের প্রার্থী ছিল। গৌতম কংগ্রেস ঘরানার ছেলে। সুতরাং এখানে যারা ডানপন্থী মনোভাবাপন্ন তারা বিকল্প হিসেবে গৌতমকে ভোট দিয়েছে। এবারও যদি গৌতম প্রার্থী
হয় তাহলে সর্বশক্তি দিয়ে ওকে
জিতিয়ে আনব।
গৌতম: প্রার্থী কে হবেন সেটা পরের বিষয়। আমি বলছি গঙ্গারামপুর আসন বিপ্লবদার হাত ধরেই জিতবে।
প্রশ্ন: হরিরামপুরের বিতর্কিত নেতা সোনা পাল বলছেন, তাঁকে দল সসম্মানে ফিরিয়ে নিলে তিনি দলের হয়ে কাজ করবেন। বিপ্লবদা, আপনার বিধানসভা এলাকা হরিরামপুর। আপনি কি মনে করেন সোনাকে দলে নেওয়া উচিত?
বিপ্লব: ও তো দলে থেকেও দলের বিরোধীতা করে গিয়েছে।
গৌতম: সোনা বহিষ্কৃত। দলে ফেরার জন্য আবেদনও করেনি। আবেদন করলে আলোচনার বিষয় হতো। কিন্তু ও কবে নির্বাচন করেছে? ২০১৯ সালেও আমরা হরিরামপুরে লিড করেছি।
বিপ্লব: আমিও যখন জিতেছিলাম সোনাকে ছাড়াই জিতেছি। আর ওকে দল বিরোধী কাজের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তখন আমি ছিলাম না। গৌতমরাই দায়িত্ব ছিল।
প্রশ্ন: তাহলে আপনাদের দু’জনকে এখন থেকে একসঙ্গে ময়দানে দেখা যাবে?
হাসতে হাসতে দুজনই বলেন, ‘‘আমরা দু’জনই দলের দায়িত্বে আছি। দু’জন মিলেই মাঠে আছি। দু’জন মিলে সব আসনেই জিতব।’’