সন্ধি? আলোচনায় গৌতম দাস (বাঁ দিকে) ও বিপ্লব মিত্র (ডান দিকে)।
গঙ্গারামপুরেই কি আটকে আছে তৃণমূলের জিয়নকাঠি? এই শহরেই থাকেন দক্ষিণ দিনাজপুরের দুই ওজনদার তৃণমূল নেতা, বিপ্লব মিত্র ও গৌতম দাস। এক সময়ে গৌতমের গুরু বলা হত বিপ্লবকে। পাঁচ বছর আগে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে এখন তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌতম। আর আদি তৃণমূল বিপ্লব গেরুয়া শিবির ঘুরে ফের পুরনো দলে। এখন জেলা চেয়ারম্যান। কিন্তু দু’জনের রেষারেষি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আদা আর কাঁচকলাও নাকি লজ্জা পেয়ে যায়? আনন্দবাজারের প্রতিনিধি নীহার বিশ্বাস ও চিত্রগ্রাহক অমিত মোহান্তের সামনে বসে কিন্তু এই কথা শুনে দু’জনেই হেসে ফেললেন।
প্রশ্ন: দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার রাজনীতির ভরকেন্দ্র এখন গঙ্গারামপুর। জেলা সভাপতি গৌতম দাস গঙ্গারামপুরের বিধায়ক। আপনি (বিপ্লব) দলের জেলা চেয়ারম্যান, গঙ্গারামপুরের বাসিন্দাও। লোকজন বলছে, এই গঙ্গারামপুর-ই পারে তৃণমূলকে পথ দেখাতে। তা হলে কি গঙ্গারামপুর থেকেই তৃণমূল ঘুরে দাঁড়াবে, নাকি গঙ্গারামপুরেই তৃণমূলের গঙ্গাযাত্রা হবে?
বিপ্লব: আমরা নিঃসন্দেহে পথ দেখাতে পারব।
প্রশ্ন: সেটা কি আদৌ সম্ভব?
বিপ্লব: আমরা সে রকমই সাংগঠনিক পরিকাঠামো তৈরি করছি। গৌতম অল্প কয়েকদিন হল দায়িত্বে এসেছে। আমিও অল্প দিন হল এসেছি। দু’জনেই চেষ্টা করছি অল্প সময়ের মধ্যে সংগঠনকে সাজিয়ে নির্বাচনের জন্য তৈরি করতে।
গৌতম: এক কথায় আমরা তৈরি।
প্রশ্ন: রাজনীতিতে আপনারা গুরু-শিষ্য বলে পরিচিত। সম্প্রতি দলের এক কর্মী খুন হয়েছেন। তারপর দলেরই আরেক নেতার মৃত্যু। এই ঘটনা নিয়ে আপনারা পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করেছেন। আপনাদের মধ্যে একটা বিভাজন স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। গুরু-শিষ্যের সম্পর্কে তবে কি ফাটল ধরেছে?
বিপ্লব: না, কোথাও কোনও বিভাজন, ফাটল নেই। হতেই পারে কোথাও কোনও ‘ইনফরমেশনের গ্যাপ’ হয়েছে। সেজন্য হয়ত এমনটা মনে হচ্ছে।
গৌতম: আমি প্রকাশ্যেই বলি, বিপ্লবদা আমার রাজনৈতিক গুরু। আমি বিপ্লবদার প্রতিদ্বন্দ্বী নই। আমি বিপ্লবদার পা ছুঁয়ে প্রণাম করি। এটাই আমার রীতি। কিছু লোক আছে যারা অতি উৎসাহী হয়ে বিভাজনটা তৈরি করে। আমার মনে হয়, এইরকম কোনও ‘ইনফরমেশন’ এলে আমাদের গুরু-শিষ্যের সেটা যাচাই করে নেওয়া উচিত। আমাদেরই উচিত এইসব অতি উৎসাহী মানুষদের চিহ্নিত করা। কারণ তারা আমাদের দু’জনের নামই বদনাম করছে। এখন সেটা দেখারই সময় এসেছে।
প্রশ্ন: জেলায় দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল তৃণমূলের বিরুদ্ধেই লড়ছে। এখন আপনাদের বড় বিরোধী বিজেপি। আপনারা বিজেপির বিরুদ্ধে কবে থেকে মাঠে নামবেন?
বিপ্লব: আমরা প্রতিদিনই বলছি, পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিজেপি কতটা ক্ষতিকর তা নিয়ে আমরা দু’জনই সভায় বক্তব্য রাখছি। এখন আমাদের যা পরিকাঠামো তাতে বিজেপিকে রুখে দেবই। জেলার ৬টি আসনই জিতব।
গৌতম: আমরা এর মধ্যেই সেই প্রচার শুরু করেও দিয়েছি।
বিপ্লব: এখানে যে শুধু বিজেপির সঙ্গেই আমাদের লড়াই হবে এমনটা নয়। এখানে কিছু জায়গায় ফ্রন্টের সঙ্গেও লড়াই হবে।
গৌতম: গত লোকসভা নির্বাচনে আমাদের কিছু ভুলের জন্য বিজেপি ভোট পেয়েছে। এর বাইরে জেলায় বিজেপির কোনও সংগঠন নেই।
প্রশ্ন: শোনা যায়, আপনাদের দু'জনের দুটো লবি। দলের নিচুতলায় এমন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব স্বাভাবিক ভাবেই বিভাজন তৈরি করেছে। এই বিভাজন কিভাবে দূর করবেন?
বিপ্লব: আমি বলছি, কোনও লবি নেই। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে দলটা করি।
গৌতম: আমিও লবির বিপক্ষে। নেতৃত্বের পরিবর্তন হতেই পারে। তার মানে এই নয় যে লবি করতে হবে।