শিকড়ের সন্ধানে কর্মসূচিতে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ সহ অন্যান্য নেতারা। নিজস্ব চিত্র।
দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্ক করে দেওয়ার পরেও চিত্র পাল্টায়নি কোচবিহারে। রাজ্যের শাসক দলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অব্যাহত বলে অভিযোগ।
কোচবিহার জেলার রাজনীতিতে তৃণমূলের জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়ের সঙ্গে দলের রাজ্য সহ-সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, গিরীন্দ্রনাথ বর্মন, বিনয়কৃষ্ণ বর্মন-সহ কয়েকজন তৃণমূলের পুরনো নেতার বিরোধ বেশ কিছু দিনের। এই দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বকে এ বার কটাক্ষ করলেন দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের বিধায়ক উদয়ন গুহ।
বিগত দিনে প্রকাশ্য জনসভায় একে অপরের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে পিছপা হননি রবীন্দ্রনাথ এবং পার্থপ্রতিম। জেলার গোষ্ঠী কোন্দল ঠেকাতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে রাজ্য নেতৃত্বকে। কলকাতায় ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলনেত্রীও। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ দলের অন্দরে। বরং ‘শিকড় ও মগডাল’ নিয়ে বিতর্কে মগ্ন দলের জেলা নেতারা।
এ বার মন্দিরে পুজো দেওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, গিরীন্দ্রনাথ, বিনয়কৃষ্ণ -সহ তৃণমূলের বেশ কয়েক জন পুরনো নেতা বিভিন্ন মন্দিরের ইতিহাস জানতে শিকড়ের সন্ধানে কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। কোচবিহার জেলায় রাজ আমলের মন্দিরগুলির ইতিহাস উদঘাটন করতে তৃণমূলের এই নেতাদের মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে পুজো দিতে এবং মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যাচ্ছে। তাদের এই কর্মসূচির নাম রাখা হয়েছে ‘শিকড়ের সন্ধানে’।
সোমবার রবীন্দ্রনাথেরা দিনহাটার কান্তেশ্বর মন্দিরে শিকড়ের সন্ধানে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে মন্দিরে পুজো দেন। কিন্তু তৃণমূলের এই পুরোনো নেতাদের মন্দিরে পৌঁছানোর একদিন আগেই কান্তেশ্বর মন্দিরেগিয়ে পুজো দিয়ে আসেন বর্তমান জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম। আর সেই পুজো দেওয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের অন্দরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে রবিরার রাতে পার্থপ্রতিমের এর পুজো দেওয়ার ছবি পোস্ট করে সেখানে লিখেছেন, ‘আগামিকাল শিকড়ের সন্ধানের আগেই আজ আগাম মগডালে সন্ধানে’।
নাটাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপির বিধায়ক মালতি রাভা রায় বলেন, তৃণমূলের নেতারা শিকড়ের সন্ধানে বেরিয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের শিকড় আলগা হয়ে গিয়েছে। তাঁরা শিকড়ের সন্ধান বলুন আর মগডালে সন্ধানেই বলুক। উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছ থেকে তাঁরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।’’
গিরীন্দ্রনাথ অবশ্য সোমবার বলেন, ‘‘এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। মন্দিরে যে কেউ পুজো দিতে যেতে পারেন। আমি জানতে পেরেছি পার্থপ্রতিম এবং তাঁর স্ত্রী জন্মদিনের মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন। তিনি যে কোনও মন্দিরে পুজো দিতে পারেন।’’ তবে উদয়ন গুহর নেটমাধ্যমে পোস্টের কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি তিনি।
পার্থপ্রতিম বলেন, ‘‘ভক্তির জায়গা থেকে যে কেউ যত বার খুশি যে কোনও মন্দিরে পুজো দিতে পারেন। তবে মন্দিরে পুজো দেওয়ার মধ্যে যাঁরা গোষ্ঠীকোন্দল খুঁজছে তাঁরা নিজেরাই দেবী-দেবতাদের কলুষিত করছেন।’’ তবে উদয়নের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পার্থ বিষয়টি এড়িয়ে যান।