পুজো সেরে: হাসিমারার তোর্সা নদীর পাশে কালী মন্দিরে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। ছবি: নারায়ণ দে।
এ যেন ‘ঐক্যের বার্তা’র বৈঠকে চরম ‘অনৈক্য’র ছবি।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে যে বৈঠক থেকে দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে ঐক্যের বার্তা দিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মঙ্গলবার সেই বৈঠকেই ওই নেতাদের অনেকে একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন। সূত্রের খবর, আলিপুরদুয়ার সার্কিট হাউজে এ দিনের বৈঠকে জেলার দুই শীর্ষ নেতা একে অন্যের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একে অন্যের বিরুদ্ধে কার্যত ক্ষোভ উগরে দেন এক শিক্ষক নেতা ও শিক্ষা প্রশাসনের পদে থাকা দলের এক নেত্রী।
এ দিন আলিপুরদুয়ার সার্কিট হাউজে বিধানসভা ধরে ধরে দলের বাছাই করা নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন অভিষেক। তার আগে ও পরে কোর কমিটি ও চা বাগানের নেতাদের নিয়েও বৈঠকে বসেন তিনি। তৃণমূল সূত্রের খবর, বৈঠকে অভিষেক আলিপুরদুয়ারের নেতাদের জানিয়ে দেন, জেলার পাঁচটি বিধানসভায় দল ভাল জায়গায় রয়েছে। তাই সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। নিজের নিজের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কমিটিতে জায়গা না পাওয়া নিয়ে কোনও কোন্দল থাকলে তা-ও দ্রুত মিটিয়ে নিতে দলের জেলা নেতাদের তিনি নির্দেশ দেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
কিন্তু এর পরই একের পর এক অনৈক্যের ছবি ধরা পড়তে শুরু করে দলের অন্দরে। সূত্রের খবর, প্রাথমিক বিদ্যালয় সাংসদের চেয়ারম্যান গার্গী নার্জিনারি তৃণমূলের স্বার্থে কাজ করছেন না বলে দলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি কৌশিক সরকার অভিযোগ তোলেন। তা জানতে পেরে সার্কিট হাউজে ছুটে আসেন গার্গী। পাল্টা কৌশিকের বিরুদ্ধে বদলি নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তোলেন তিনি। তৃণমূল সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে দলের জেলা শীর্ষ নেতাদের একাংশ গার্গীর পাশে দাঁড়ান।
কিন্তু তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের অনৈক্যের সবচেয়ে বড় ছবিটি ফুটে ওঠে চা বাগান নিয়ে বৈঠকে। অভিযোগ, সেখানে অভিষেকের সামনেই প্রকাশ্যে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন মোহন শর্মা ও পাসাং লামা। সেই সময়ে পাসাংকে একবার চিৎকার করে চুপও করিয়ে দেন মোহন। যদিও বৈঠক নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মোহন। পাসাং বলেন, “বৈঠকে কোনও তর্কাতর্কি হয়নি। দাদা হিসেবে আমি মোহন শর্মার পা ধরতেই পারি। এটাই সংস্কৃতি।”
আলিপুরদুয়ারে সাংগঠনিক বৈঠকের আগে এ দিন হাসিমারায় তোর্সা নদীর ধারে শ্মশান কালী মন্দিরে পুজো দেন অভিষেক। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন অভিষেকের উত্তরবঙ্গ সফর সম্পর্কে বলেন, ‘‘গত নির্বাচনে মানুষ ভোট দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, তাঁরা কাদের সঙ্গে আছেন। আগামীতেও তারা বুঝিয়ে দেবেন। ওঁরা যান, ঘুরে দেখে আসুন, বুঝে আসুন, হাওয়া কী বলছে।’’
অভিষককে আক্রমণ করে আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা বলেন, “আলিপুরদুয়ারে ওঁরা ভাল জায়গায় আছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ। মানুষ তো বটেই, রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীরাও প্রতিদিন ওদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।”