ফাইল চিত্র
প্রথমে মে মাসে সিকিমের নাকু লা-তে সংঘর্ষ। তার এক মাসের মধ্যেই লাদাখে রক্তক্ষয়ী লড়াই। এই দুই ঘটনার পরে ভারতীয় সেনা এখন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) তো বটেই, সিকিমের নাকু লা থেকে নাথু লা বা ডোকলামের মতো চিন সীমান্তের সব ক’টি চৌকিতেই ২৪ ঘণ্টা অতন্দ্র প্রহরা মোতায়েন রাখছে। যাতে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) এলাকার দখলদারি রুখে দেওয়া সম্ভব হয়।
সেনা সূত্রের খবর, লাদাখের অস্থিরতা সুযোগে অন্য প্রান্তের সীমান্তেও পিএলও নিজেদের অস্বিস্ত যে কোনও সময় মজবুত করার চেষ্টা করতেই পারে। আবার ইচ্ছাকৃতভাবে একাধিক জায়গায় সুযোগ বুঝে এগিয়ে এসে অস্থিরতা তৈরি করা, ভারতীয় ভুখণ্ডে ঢুকে পড়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বাঙ্কার নষ্ট করা বা নিজেদের সামরিক পরিকাঠামো বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই পারে। তা সামাল বা মোকাবিলা করতেই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে সেনা জওয়ানদের।
উঁচু পাহাড়ি এলাকায় নিয়মিত ঝড় বৃষ্টি চলছে। জুন মাস হলেও ঠান্ডা হাওয়া কাঁপুনি ধরানোর জন্য যথেষ্ট। তার মধ্যেই প্রত্যেক সেক্টরকে সীমান্তে ‘বহুত জ্যদা মজবুতি সে ডাটে রহে’ (জোরের সঙ্গে মাটি কামড়ে তৈরি থাকুন) নির্দেশ পৌঁছেছে। তেমনিই, সিকিম সরকারের তরফেও নিয়মিত পরিস্থিতির উপর নজর রেখে কেন্দ্রকে রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর ৩৩ কোরের সুকনা সদর দফতরে অফিসারদের একাংশ এখন রাতদিন চিন সীমান্তে নজরদারিতেই ব্যস্ত। সেই সঙ্গে ভারত তিব্বত পুলিশ ফোর্স বা আইটিবিপি, বায়ুসেনার সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলা হচ্ছে। সেনার এক পদস্থ আধিকারিকেরা কথায়, ‘‘চিন ভারতের যুদ্ধ বা সংঘর্ষের ইতিহাসে সিকিম সীমান্ত বরাবর জায়গা করে নিয়েছে। তাই আমরা বর্তমান পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিতে রাজি নই। যাবতীয় সামরিক বন্দোবস্ত প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’’
মে মাসে করোনা আবহের মধ্যেই সিকিমের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে নাকু লা-এ চিনা ও ভারতীয় সেনার মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। আলোচনায় বিবাদ মিটলেও সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘন করে চিনের সেনারা এ পারে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছিল বলে অভিযোগ। সেনা সূত্রে দাবি, তা ঠেকাতে গিয়েই ধাক্কাধাক্কি, ঢিল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। ৩ জন ভারতীয়, ৭ জন চিনা জওয়ান আহত হন। আবার ২০১৭ সালে ডোকলামে ৭৪ দিন দুই সেনাবাহিনী মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়েছিল। অমীমাংসিত সীমান্ত এলাকায় রাস্তা তৈরির সময় চিন ভারতে ঢুকে পড়ায় ডোকলামে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।
সিকিমে চিনের সঙ্গে সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২২০ কিলোমিটার। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর থেকে নাথু লা সীমান্ত বন্ধ ছিল। ২০০৬ সালে দু’দেশের সরকার তা চালু করে। ১৯৬৭ সালে নাথু লাতেই দুই দেশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে। সেনাবাহিনীর সুকনা সদর দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সীমান্তে চিনের এগিয়ে আসার মনোভাব বরাবরই দুর্ভাগ্যজনক। সুযোগ পেলেই ঘাঁটি, বাঙ্কার বা রাস্তা তৈরি করবে। আবার আমাদের দেশের তরফে পরিকাঠামোর কাজ হলে তাতেও বাধা দেবে। সিকিমে এমন বারবার হয়েছে।’’