(বাঁ দিকে) অরবিন্দ ঘোষ ও আলম খান। —নিজস্ব চিত্র।
সকাল থেকেই বুথে বুথে দৌড়ে বেড়িয়েছেন। চা ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ার সময় পাননি। বেলা তিনটের পরেও তাঁর ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের বুথ উদয়ন সমিতিতে ভোটারদের লম্বা লাইন। তাই যত ক্ষণ পর্যন্ত লাইনে দাঁড়ানো শেষ ভোটদাতাটি ভোট দিয়ে না বের হচ্ছেন, তাঁর স্বস্তি নেই। তিনি শিলিগুড়ি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী অরবিন্দ ঘোষ। জয়ের ব্যপারে আশাবাদী অরবিন্দবাবু।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী আলম খানের বিরুদ্ধে রয়েছেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। বামেদের অশোক ভট্টাচার্য ও তৃণমূলের প্রার্থী আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি অরূপরতন ঘোষ। তাঁদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই ফিরিয়ে দিলেন যিনি, সেই নির্দল প্রার্থী আলম খানকে নিয়ে ভোটের আগে চর্চা হয়েছে প্রচুর। এদিন অবশ্য তাঁর ওয়ার্ডের ফল কী হবে তা জানতে চাইলে শুকনো হাসি ফিরিয়ে দিলেন। মুখে বললেন, ‘‘জিতব’’। তবে তাঁর শরীরী ভাষায় তা ফুটে উঠল না। আরও এক নির্দল প্রার্থীকে নিয়ে জোর আলোচনা ছিল পুর এলাকায়। ৪৬ নম্বরের প্রার্থী দিলীপ বর্মন। তাঁকে বিকেল তিনটে নাগাদ ভোট কেন্দ্রের আশপাশে দেখা গেল না। ফোনেই কথা হল। তিনি জানালেন, ‘‘যেই জিতুক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।’’
ভোটের ফলের আশায় এঁদের মধ্যে চিন্তাভাবনার পার্থক্য থাকলেও মিলও রয়েছে। তিনজনই এলাকায় পরিচিত। সমাজসেবী হিসেবে তিনজনেরই অল্পবিস্তর সুনাম রয়েছে। আরও একটি মিল রয়েছে এই তিন প্রার্থীর মধ্যে। এঁরা সকলেই তৃণমূল থেকে বের হয়ে গোঁজ হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়েছেন শাসক দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে। তবে বাকি দু’জন টিকিট না পেয়ে প্রার্থী ঘোষণার পরে তৃণমূল ছেড়েছেন। অরবিন্দবাবু দল ছেড়েছেন এক বছর আগে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে নীতিগত বিরোধ হওয়ায়।
প্রত্যেকেই জানালেন, ভোরে বেরিয়েছেন। খাওয়াদাওয়া বলতে চা, সঙ্গে বড়জোর বিস্কুট। কখনও এই বুথে কখনও অন্য বুথে। জেতা হারা নয়, লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জটা নিয়েছেন। অরবিন্দবাবু অবশ্য ভোটের জন্য মানবিকতা বজায় রাখার পক্ষপাতী। অবলীলায় জানালেন, প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূলের প্রার্থী মৈত্রেয়ী চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। আবার বিজেপি প্রার্থী রাজু সাহার মতো আনকোরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই উপভোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ভোটে অনিচ্ছা সত্ত্বেও দাঁড়িয়েছি। তবে জিতেই ময়দান থেকে বের হতে চাই।’’ আলম খান অবশ্য দাবি করেন জিতবেন বলে। তবে দলের আশ্রয় না থাকায় অসুবিধা হয়েছে তাও স্বীকার করলেন। তবে তিনিই একমাত্র নির্দল প্রার্থী, যিনি নিয়মিত মিছিল, মিটিং করেছেন, বুথ অফিস তৈরি করেছেন, অন্য প্রার্থীর সঙ্গে তরজায় নেমেছেন ফলে আশা না করেই। তবে চতুর্মুখী লড়াইয়ের চাপ না নিতে পেরেই ঢিলে দিয়েছেন অপর নির্দল দিলীপবাবু বলে এলাকার বাসিন্দাদের মত। তাঁর বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর শিখা রায়, অন্য ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর বামফ্রন্টের মুকুল সেনগুপ্ত কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া জয়প্রকাশ চহ্বন ও বিজেপির প্রার্থী হরেন্দ্র যাদব। এদিন তাঁকে দু’বার গিয়ে না পাওয়া যাওয়ায় ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘‘কী হবে বলা মুশকিল। তবে সহজ জয় কেউ পাবে না।’’ তিনি জিতবেন বলে কতটা আশাবাদী? ‘‘জিততেও পারি’’ জানালেন তিনি।
এক বছর আগেই দলের জেলা শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মতবিরোধ করে দল ছেড়েছিলেন, অরবিন্দবাবু। তার পর থেকে দলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি দলে ফেরেননি। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আগে দীর্ঘদিন সিপিএমের হয়ে কাউন্সিলর ছিলেন।
আবার আলম খান দলের প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার আগে পর্যন্ত ওয়ার্ডের সভাপতি ছিলেন। দল প্রার্থী করবে বলে আসা করে সংগঠন বাড়ানোর কাজ করেছিলেন। শেষে দল টিকিট না দেওয়ায় তিনি নির্দল থেকে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। একই ঘটনা ঘটেছে দিলীপবাবুর ক্ষেত্রেও। তিনিও ভোটের আগে পর্যন্ত এলাকায় খেটে নিজের ও দলের জন্য পটভূমি তৈরি করেছিলেন। তাঁর বদলে শেষ মুহূর্তে দল জয়প্রকাশকে প্রার্থী করায় তিনিও বিক্ষুব্ধদের দলে নাম লেখান। দলকে বিপাকে ফেলতেই তাঁর এই পদক্ষেপ।