national flag

Independence day 2022: ‘দলাদলির’ জমি থেকে ওঠে আর্জি, ছেলেদের ভিন‌রাজ্যে যেতে না হয়

ছোটবেলা থেকেই দিনটিকে আলাদা শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছেন। এ বারও ৭৫ তম  স্বাধীনতা দিবসের পতাকা উত্তোলনে জনতার ভিড়ে শামিল হবেন তাঁরা।

Advertisement

অভিজিৎ পাল

চোপড়া: শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২২ ০৯:০১
Share:

চোপড়ার লক্ষ্মীপুরে এখন বাজার বসছে স্বাভাবিক ছন্দেই। নিজস্ব চিত্র

‘‘আদৌও কি স্বাধীন আমরা! যেখানে দলের সম্মেলনে ঝান্ডা লাগাতে পারি না! এমন স্বাধীনতা কেউ চাইনি, কোনও দিন!’’, বলতে বলতেই রাগে ফুঁসছিলেন লক্ষ্মীপুর বাজারের পঞ্চাশোর্ধ্ব এক আনাজ ব্যবসায়ী আব্দুল কাশেম। যদিও তিনি একাই বিরোধী একটি দল করেন সেখানে বলে দাবি তাঁর। কিছুটা সুরে সুর মেলালেন পাশেরই এক মিষ্টি বিক্রেতা বছর ৬৭-র দেবেন মোদকও। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ি-বাড়ি দেশের তিরঙ্গা ওড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এখানে কি আদৌ তা নজরে পড়বে? বৃদ্ধ বলে চলেন, ‘‘আগে সবাই এক সঙ্গে পতাকা উত্তোলন করত। এখন তা নিয়েও দলাদলি। এ সব নিয়ে মুখ খুলতেও ভয় লাগে।’’

Advertisement

তবে দু’জনেই জানালেন, ছোটবেলা থেকেই দিনটিকে আলাদা শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছেন। এ বারও ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের পতাকা উত্তোলনে জনতার ভিড়ে শামিল হবেন তাঁরা।

এক সময় উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার এই লক্ষ্মীপুর বাজারে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে, সব চেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল এলাকা। লাগাতার বোমা পড়া, গুলি চলার ঘটনা দেখেছেন স্থানীয়েরা।

Advertisement

একই পরিস্থিতি ছিল কয়েক কিলোমিটার দূরের দাসপাড়া এলাকাতেও। শুধু রাজনৈতিক সংঘর্ষের জেরেই এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বাভাবিক জনজীবনে, ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলেছে। তবে স্থানীয় কিছু বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েতে এখন বিরোধী নেই বলে এখন আর গন্ডগোল নেই। কেউ চাপে পড়ে দল বদলেছে। কেউ আবার নিজে থেকেই সরে গিয়েছে রাজনীতি থেকে। তবু আবহাওয়ার মতো এই এলাকার পরিস্থিতি কখন বদলায়, বোঝা মুশকিল।’’

চোপড়া বিধানসভার বিজেপির আহ্বায়ক তথা জেলা বিজেপির সম্পাদক সুবোধ সরকারের অভিযোগ, ‘‘রাজ্যের শাসক দলের নেতারা ১০০ দিনের প্রকল্পে দুর্নীতি করেন। এই এলাকায় চাষ, শিল্প নষ্ট করে দিচ্ছেন গা-জোয়ারি করে। বাধ্য হয়ে এলাকা থেকে ফি বছর তরুণ, যুবকেরা ভিন‌্-রাজ্যে যান কাজের খোঁজে। ছেলেরা বাইরে কাজ করতে না গিয়ে করবে কি? শুধু লক্ষ্মীপুর বা দাসপাড়া নয়, সমস্ত চোপড়া জুড়েই ক্ষোভে ফুটছেন মানুষ।’’

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএমের উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক আনওয়ারুল হক বলেন,‘‘আমরা সব সময় বলছি, রাজ্যে শিল্প নেই। তাই এই রাজ্যে সবচেয়ে বেশি লোক পরিযায়ী শ্রমিক। শিল্প না হলে, পরিযান বন্ধ করা সম্ভব নয়।’’

১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন চোপড়ার বিধায়ক তৃণমূলের হামিদুল রহমান। তাঁর দাবি, ‘‘কেন্দ্র ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা পাঠায়নি। উল্টে পরিদর্শক পাঠিয়েছে। যদিও পরিদর্শকেরা এলাকায় এসে কোনও দুর্নীতি পাননি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এলাকায় কিছু চা কারখানা আছে। বিরোধীরা শুধু মুখে বড় বড় কথা বলে। বিরোধীরা এলাকায় কারখানা করুন। বাধা কোথায়?’’

লক্ষ্মীপুর-দাসপাড়া রোডের কাশিমগছ চকে গাছ তলায় জিরোচ্ছিলেন বছর তিরিশের টোটো চালক মহম্মদ সমির। তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতার অর্থ বুঝি না। প্রতিটি জিনিসের দাম যা বেড়েছে, তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। বাড়িতে পতাকা লাগাতে হলে, কিনতে হবে। বাড়তি টাকা পাব কোথায়?’’ দাসপাড়ার প্রত্যন্ত এলাকার মহম্মদ জমিরুদ্দিনের আর্জি, ‘‘এখানে কাজ মিললে, ছেলেগুলো ঘরে থাকবে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে, সেটাই হোক না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement