১০ দিনে ২২। এটাই শিলিগুড়ির স্কোরবোর্ড।
এই রান অবশ্য তুলছেন ভোট-ময়দানে নেমে পড়া যুযুধান দলগুলি। কমিশনে যত অভিযোগ জমা পড়েছে রান ততই বাড়ছে। বস্তুত, শাসক-বিরোধীর মধ্যে অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের চাপানউতোরে জেলার অন্য বিধানসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে সব চেয়ে বেশি সরগরম হয়ে উঠেছে শিলিগুড়ি। গত ১০ দিনে শাসক এবং বিরোধী পক্ষের তরফে অন্তত ২২টি অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা পড়েছে এই বিধানসভা এলাকায়। তুলনায় ফাঁসিদেওয়া-খড়িবাড়ি বা মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে শাসক বা বিরোধী পক্ষের অভিযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। সেগুলিতে একটি করে অভিযোগ হয়েছে। পাহাড়ের তিন বিধানসভা কেন্দ্রে নিয়ে সব মিলিয়ে গত ১০ দিনে গোটা দশেক অভযোগ জমা পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের নজরে শিলিগুড়িকে সে কারণে বিশেষ গুরুত্বও দেওয়া হচ্ছে। এই বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখতে দু’জন সাধারণ পর্যবেক্ষক আসছেন। মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি বা ফাঁসিদেওয়া-খড়িবাড়ির জন্য অবশ্য এক জন করেই সাধারণ পর্যবেক্ষক থাকছেন।
রাজনৈতিক দলগুলি সূত্রেই জানা গিয়েছে, ফাঁসিদেওয়া-খড়িবাড়িতে শাসকদলের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত বামেরা একটি অভিযোগ জমা করেছে এলাকার রহিমাবাদ চা বাগানে তৃণমূলের পতাকা লাগানো নিয়ে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের বিশেষ অনুমতি নিয়েই রাঙাপানিতে নুমালিগড় রিফাইনারির মার্কেটি ডিপো থেকে ট্রেনে করে ডিজেল বাংলাদেশে প্রথম পাঠানোর অনুষ্ঠান উদ্বোধন হয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিজেপি’র সাংসদ ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন। মাটিগাড়া বিধানসভা কেন্দ্রে তা নিয়েও অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। বিজেপি’র কটাক্ষ, নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিয়েই অনুষ্ঠান হয়েছে। তার পরেও মিথ্যে অভিযোগ করে দোষারোপ করতে চাইছে তৃণমূল। অন্যদিকে ১১ মার্চ থেকে শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে শাসক এবং বিরোধীদের তরফে নির্বাচন কমিশনের কাছে একের পর এক অভিযোগ চলছেই।
মডেল কোড অব কনডাক্টের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক শ্যামল সেন বলেন‘‘এখন পর্যন্ত জেলায় শিলিগুড়ি বিধানসভা ক্ষেত্রেই অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ বেশি পড়েছে। শিলিগুড়িতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখতে দুই জন পর্যবেক্ষক আসছেন।’’ সমস্ত ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে এমসিসি সেলের দাবি।
নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলি সূত্রেই জানা গিয়েছে, ভোট ঘোষণার পর গত ১১ মার্চ শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তোলে তৃণমূল। অভিযোগ, শিলিগুড়ির হাসমি চকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হোর্ডিং, ব্যানার লাগানো রয়েছে। এক দিন বাদেই তরাই তারাপদ আর্দশ বিদ্যাপীঠে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত হোর্ডিং থাকার অভিযোগ জানায় সিপিএম। এর পর একে একে শিলিগুড়িতে অনুমতি ছাড়া মিছিল করা, নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা হলেও পুরসভার ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করা নিয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে তৃণমূল। সিপিএমের তরফেও ভেনাস মোড়ে শাসক দলের হোর্ডিং, মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রার মঞ্চ করা, বিভিন্ন জায়গায় সরকারি হোর্ডিং না সরানো, তৃণমূল প্রার্থী কলেজে প্রচারে যাওয়া-সহ বিভিন্ন অভিয়োগ তোলা হয়।
শিলিগুড়ি কেন্দ্রে সিপিএমের তরফে অশোক ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে দলের তরফে। তৃণমূলের তরফে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে ভাইচুং ভুটিয়াকে। দুই পক্ষের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ চলছেই। সিপিএমের তরফে জানানো হয়েছে, গ্রামাঞ্চলেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি রঞ্জন সরকার বলেন, ‘‘ফাসিদেওয়া এবং নকশালবাড়িতে অভিযোগ কম রয়েছে। শিলিগুড়িতে যিনি রয়েছেন তিনি নানা অনিয়ম করতে চান তাই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশি করতে হচ্ছে।’’ বিজেপি নেতারা অবশ্য এখনও ময়দানেই নামেননি। দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি অরুণপ্রসাদ সরকার জানান, তাঁদের প্রার্থী ঘোষণা হলেই দ্রুত তারা নামবেন। কংগ্রেসের অন্যতম জেলা নেতা সুবীন ভৌমিকরা জানান, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া-খড়িবাড়ির নানা জায়গায় সরকারি হোর্ডিং রয়েছে। তাঁরা দ্রুত অভিযোগ জানাবেন।