—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
চার পাশে চাষের জমি। মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। তবুও মাছের জাল, মশারি হাতে আঁধার রাতে ভিড় বাড়ে ওদের। চাষের জমিতে কী মাছ মেলে? মুখে হাসি কালিয়াচকের চরি অনন্তপুর সীমান্তের এক চল্লিশোর্ধ্বের— “জালে মাছ নয়, ‘পানি’ উঠবে ।“
সাধারণ মানুষের মনে বিস্ময় থাকলেও ‘জালে পানি’ মালদহের চরি অনন্তপুর, দৌলতপুর, শব্দলপুর, মিলিক সুলতানপুর, পারলালপুর, তিলাসন, খুটাদহের মতো সীমান্ত পারের বাসিন্দাদের কাছে অতি পরিচিত শব্দ। তাঁদের দাবি, সীমান্তে এখন পাচারের নতুন সংযোজন কাশির সিরাপ। যা নেশার কাজে ব্যবহৃত হয়। সেই সিরাপ কোথাও পানি, কোথাও ডাল, ছোট বোতল বা ছ’ইঞ্চি নামে পরিচিত চোরা-বাজারে।
সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। রয়েছে বিএসএফের নজরদারি। তাও কী ভাবে পাচার হচ্ছে নেশার সিরাপ? সীমান্তে কান পাতলেই মিলবে উত্তর। জানা গিয়েছে, নেশার সিরাপ এ-পারে ১০০ মিলি ৩৫০-৪০০ টাকা হলেও ও-পার বাংলায় দ্বিগুণের থেকেও বেশি দামে বিক্রি হয়। তাই ঝুঁকি থাকলেও মোটা টাকার হাতছানিতে সিরাপ পাচারে যুক্ত হচ্ছে সীমান্তের কিশোর, তরুণ ও যুবকেরা। এ পার থেকে ২৫ বা ১২টি সিরাপের প্লাস্টিকের প্যাকেট করা হয়। সে প্যাকেট হাতের জোরে কাঁটাতারের ও-পারে ছুড়ে দেওয়া হয়। আর মোবাইল ফোনের রিং বেজে উঠলেই জাল ফেলে প্যাকেটগুলি সংগ্রহ করে ‘চোরাপার্টিরা’। ১০০ বোতল নেশার সিরাপ পাচার হলেই চোরাপার্টির হাতে আসে নগদ দশ হাজার টাকা।
সীমান্তে পৌঁছতেও নেশার সিরাপের বোতলের সঙ্গে ওড়ে টাকাও। গত সপ্তাহে বৈষ্ণবনগরের ১৬ মাইল থেকে দেড় কোটি টাকা মূল্যের নেশার সিরাপ বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। গ্রেফতার হয় ভিন রাজ্যের এক যুবক। পুলিশের দাবি, ত্রিপুরার আগরতলা থেকে কলকাতা হয়ে ধৃত যুবক নেশার সিরাপের ২৫ হাজার বোতল শিলিগুড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। নাকা-চেকিং করে পিক-আপ ভ্যান থেকে বোতলগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়। শুধু ১৬ মাইলই নয়, কখনও গাজল, কখনও কালিয়াচক কিংবা মহদিপুরে উদ্ধার হয়েছে শ’য়ে শ’য়ে নেশার সিরাপের বোতল। গ্রেফতার হয়েছে একাধিক কারবারি। বিএসএফের অভিযানেও উদ্ধার হয়েছে হাজার হাজার নেশার সিরাপের বোতল।
উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্য থেকে জেলায় ঢুকছে নেশার সিরাপ। সে সিরাপ হাত ঘুরে পৌঁছে যাচ্ছে বাংলাদেশে। আবার কিছু ওষুধ ব্যবসায়ীর মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে জেলার তরুণ, যুবকদের একাংশের হাতে। আর আড়ালে থেকে যাচ্ছে নেশার সিরাপের বড় কারবারিরা। মালদহের এক নেশামুক্তি কেন্দ্রের আবাসিক বলেন, “কাশির সিরাপের নেশা মাদকের নেশাকেও হার মানাবে। এক বোতলে একবারই খেয়ে নেওয়া যায়। তাতে সবসময় ঘোরে থাকা যায়।” কালিয়াচকের সুজাপুর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আদিল হোসেন বলেন, “সিরাপের মতো নেশা থেকে যুব সমাজকে দূরে রাখতে পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। ছেলেদের সচেতন এবং সতর্ক করতে হবে। এ ছাড়া প্রয়োজন পুলিশের আরও ধরপাকড়।” মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “নেশার সিরাপের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।”