রাসমেলার উদ্বোধনী মঞ্চে অনন্ত রায়। নিজস্ব চিত্র।
কোচবিহারে রাসমেলার উদ্বোধন করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ। উদ্বোধনী সেই মঞ্চে উপস্থিত একঝাঁক তৃণমূল নেতৃত্বের মাঝে দেখা গেল দ্য গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা অনন্ত রায় (মহারাজ)-কে। তৃণমূল যেখানে পৃথক রাজ্যের দাবিকে কোনও ভাবেই সমর্থন করে না, সেখানে কয়েক দিন আগেই ‘বাংলা ভাগ হয়েই গিয়েছে’ দাবি করা অনন্ত তাদের সঙ্গে এক মঞ্চে তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা। তাতে ঘৃতাহুতি দিয়েছে অনন্তের আর এক মন্তব্য। মঙ্গলবার বলেছেন, শাসকদলের ধারেকাছেও তিনি থাকতে চান না।
গত বিধানসভা নির্বাচন এবং লোকসভা নির্বাচনে অনন্ত মহারাজকে সরাসরি ভাবে বিজেপির হয়ে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল। বাংলা ভাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন তিনি। দিন কয়েক আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বাড়িতেও গিয়েছিলেন। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি দাবি করেন, ‘‘পৃথক রাজ্য হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।’’ যদিও পৃথক রাজ্যের বিষয়ে কোনও মন্তব্যই করেননি নিশীথ। তিনি বলেন, ‘‘অনন্ত মহারাজের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। এই বৈঠক ছিল সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ।’’
কিছু দিন আগেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনন্তকে ভাইফোঁটার শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান। কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ তাঁর বাড়িতে গিয়ে সেই শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছেও দেন। এ বার তৃণমূল পরিচালিত সেই কোচবিহার পুরসভার আমন্ত্রণে রাসমেলার উদ্বোধনী মঞ্চে দেখা গেল অনন্তকে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে অনন্তকে বিভিন্ন ভাবে কাছে টানার চেষ্টা করা হলেও রাসমেলার উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে নেমেই তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘‘শাসক দলের ধারে কাছে নেই আমি। রাসমেলা একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তাই এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি।’’ অনন্তের এই বক্তব্যের পর উদয়ন বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তৃণমূলের কর্মীরাই একমাত্র ভোট টানতে পারেন। তাঁরা যদি একসঙ্গে থাকেন তা হলে আর অন্য কারও ভোটের প্রয়োজন নেই।”
অনন্তের সঙ্গে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠাতায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের অন্দরেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা দাবি করছেন, অনন্তের সঙ্গে দলের এমন সম্পর্কে কর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। দলের উপরের একটি অংশ অবশ্য তা মানতে নারাজ। তাদের দাবি, তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কের জন্যই বিজেপির ইন্ধনেও অনন্ত আলাদা রাজ্য নিয়ে বড় কোনও আন্দোলনের দিকে যাচ্ছেন না। তারা মনে করছে, অনন্তের হাতে একটি বড় ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে। যা এত দিন পুরোপুরি বিজেপির হাতে ছিল। ভাল সম্পর্ক বজায় রাখলে সেই ভোটব্যাঙ্কেও থাবা বসাতে পারবে তৃণমূল।