বাম-কংগ্রেসের হাস্য মুখর মিছিল দিনহাটায়। নিজস্ব চিত্র।
এআইসিসি সদস্য ফজলে হকের নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ের সম্ভাবনা নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই উদয়ন গুহের খাসতালুক বলে পরিচিত দিনহাটায় জমজমাট মিছিল করল বাম-কংগ্রেস জোট। আমন্ত্রিত হয়েও ফজলেবাবু না গেলেও রবিবার বাম-কংগ্রেস গণতান্ত্রিক ধর্ম নিরপেক্ষ জোটের ব্যানারে আয়োজিত মিছিলে নজরকাড়া ভিড়ও ছিল। পুরোভাগে ছিলেন সিতাইয়ের কংগ্রেস প্রার্থী কেশব রায় ও দিনহাটা কেন্দ্রের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী অক্ষয় ঠাকুর।
এ দিন দুপুরে দিনহাটা স্টেশন মোড় এলাকা থেকে ওই মিছিল শুরু হয়। মেন রোড হয়ে মিছিল যায় মদনমোহন বাড়ি মোড় পর্যন্ত। সেখান থেকে ঘুরে মিছিল শেষ হয় সংহতি ময়দান এলাকায়। প্রায় এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে ওই মিছিলের জেরে শহরে স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হয়। গোটা মিছিল জুড়েই ছিল উৎসাহী কর্মী সমর্থকদের স্লোগান। প্ল্যাকার্ড, পোস্টারেও সমর্থকরা বাসিন্দাদের নজর কাড়ার চেষ্টায় খামতি রাখেননি। সব কিছুতেই মূল আক্রমণের লক্ষ্য ছিলেন অবশ্য দিনহাটার তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ।
তাঁকে কটাক্ষ করেই হাতে পোস্টার, ব্যানার নিয়ে মিছিলে সামিল হন জোট কর্মীদের অনেকে। উদয়নবাবুর বিরোধিতায় ঘনঘন স্লোগান তোলেন তাঁরা। যা নিয়ে মিছিলে ওঠে হাততালির রব।
দিনহাটার ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী অক্ষয় ঠাকুর বলেন, “উদয়নবাবুর দলবদল কর্মীরা তো বটেই এলাকার বাসিন্দারাও ভাল চোখে দেখছেন না। মিছিলের পোস্টার, ব্যানারে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে। যুব কর্মী সমর্থকরাই ও সব করেছেন। তবে সব মিলিয়ে মানুষের ঢল দেখে আমরা খুশি।” সিতাইয়ের কংগ্রেস প্রার্থী কেশব রায় বলেন, “উদয়নবাবু ফরওয়ার্ড ব্লকের টিকিটে জিতে দিনহাটার চেয়ারম্যান হন। অথচ ব্যক্তিগত স্বার্থে দলবদল ছিলেন। সেই ক্ষোভেই ওঁর বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড, স্লোগান বেশি ছিল।” দিনহাটার তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ অবশ্য এ নিয়ে পাল্টা তোপ দেগেছেন। উদয়ন বলেন, “আমি তো শুধু দলবদল করেছি, কিন্তু যে ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিএম , কংগ্রেস দলের নীতিটাই বদলে অনৈতিক জোট করেছে, তাঁদের নেতাদের মুখে ওই সব কথা মানায় না। তা ছাড়া এতেই স্পষ্ট হয়েছে দিনহাটার ক্ষেত্রে মমতা বন্দোপাধ্যায় নয়, উদয়ন গুহ ওদের প্রধান শত্রু । এ দিক দিয়ে আমি দলনেত্রীকে কিছুটা রিলিফ দিতে পেরেছি।”
দলীয় সূত্রের খবর, জোট করে কোচবিহারে ন’টি আসনের সাতটিতে বামেরা ও দু’টিতে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে। তার মধ্যে দিনহাটা আসন পেয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক।
কিন্তু ওই আসনে প্রার্থী হতে তৎপর হয়ে উঠেছেন এআইসিসি সদস্য ফজলে হক। ফলে এদিনের মিছিলে কত সংখ্যক সমর্থক হাজির হবেন, তা নিয়ে জোট নেতৃত্বের অন্দরে সংশয় ছিল। পরিস্থিতির জেরে শনিবার রাতেই ফজলে হকের সঙ্গে দেখা করেন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী অক্ষয়বাবু। তাতেও অবশ্য বরফ গলেনি। এদিনের মিছিলে যাননি ফজলে হক ও তাঁর অনুগামীরা। তারপরেও অবশ্য এদিন মিছিলে ভিড় দেখে উচ্ছ্বসিত জোট নেতৃত্ব। ঘটনাচক্রে এদিনই বিকালে বাড়িতে কংগ্রেস নেতাকর্মীদের একাংশকে নিয়ে বৈঠক করেন তিনি।
বৈঠকে তিনি নির্বাচনে লড়াইয়ে নামবার ব্যাপারে তিনি যে হাল ছাড়ছেন না, সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এদিন ফজলে হক বলেন, “দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। ওই ব্যাপারে চেষ্টা হচ্ছে। সে জন্য মিছিলে যাইনি। অবশ্য হাত প্রতীক না পেলে কী পদক্ষেপ নেব, সে ব্যাপারে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ ঠিক করব।”
সেই সঙ্গে ফজলেবাবুর অভিযোগ, জেলা কংগ্রেস সভাপতি ও সিতাইয়ের বিধায়ক চাইছেন না বলেই রাজ্য নেতৃত্বের তরফে তাঁকে প্রতীক দেওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। দুই নেতাই ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কোচবিহার জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেন, “প্রতীকের বিষয় এআইসিসি ও প্রদেশ নেতৃত্বের ব্যাপার।” কেশববাবুর প্রতিক্রিয়া, “ফজলে হক আমারও নেতা। ওঁনার টিকিট আমি আনব কী করে!”