‘পেঁয়াজ চেয়ে লজ্জা দেবেন না’

এ দিন সকালে বিধান মার্কেটে বাজার করতে গিয়েছিলেন সরকারি কর্মী মণিময় সান্যাল। বাড়ির রান্নাঘরে আমিষে জোর থাকায় সপ্তাহে দু’কেজি পেঁয়াজ স্যানাল পরিবারে যেত। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে এক কেজিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৯ ০২:২৭
Share:

অগ্নিমূল্য: একশো পার করে আরও এগোচ্ছে কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম। নিজস্ব চিত্র

শিলিগুড়ির বাজারে যেন এখন শুধু পেঁয়াজেরই ঝাঁজ। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, চাহিদার তুলনায় শিলিগুড়ি বাজারে পেঁয়াজের আমদানি কমেছে আটগুণেরও বেশি। তার জেরেই বাজারে ওই আনাজের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। রবিবারের খুচরো বাজারে ১০০ টাকা কেজি দরে বিকিয়েছে পেঁয়াজ। এই চড়া দাম আগামী ১ মাসের আগে কমবে না বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, এ বছর বন্যায় রাজস্থান এবং মহারাষ্ট্রের একটি মরসুমের উৎপাদন মার খেয়েছে। তার জেরেই এমন অবস্থা হয়ে থাকতে পারে। শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার থেকেই নেপাল এবং ভুটানেও মাল যায়। কমেছে সেইসব মালও। গৃহস্থের ভাঁড়ারে টান যেমন পড়েছে। তেমনি একই অবস্থা হোটেলগুলিতেও।

Advertisement

এ দিন সকালে বিধান মার্কেটে বাজার করতে গিয়েছিলেন সরকারি কর্মী মণিময় সান্যাল। বাড়ির রান্নাঘরে আমিষে জোর থাকায় সপ্তাহে দু’কেজি পেঁয়াজ স্যানাল পরিবারে যেত। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে এক কেজিতে। মণিময় বললেন, ‘‘মাছ কিনছি ১০০ টাকায়। বাকি ১০০ টাকায় পেঁয়াজ।’’ বাসিন্দাদের মতই হাল শহরের ফাস্টফুড বিক্রেতাদের। কেউ কেউ পেঁয়াজের সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছেন মুলো। কেউ আবার একমুঠো পেঁয়াজের বদল দুই আঙুলে মেপে গ্রাহকের প্লেটে তুলে দিচ্ছেন ‘বহুমূল্য’ পেঁয়াজ।

পাইকারি বাজার সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি এবং বৃহত্তর শিলিগুড়ির জন্য রোজ প্রয়োজন ২৫ গাড়ি করে পেঁয়াজ। কিন্তু এখান আসছে মাত্র তিন গাড়ি। তার জেরে পেঁয়াজের বাজার আগুন। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, মহারাষ্ট্রের নাসিক, রাজস্থান থেকেই মূলত পেঁয়াজ আসে শিলিগুড়ির নিয়ন্ত্রিত বাজারে। সেই জোগান কমেছে। ট্রেডার্স ইউনাইটেড ফোরামের সম্পাদক তপন সাহা বলেন, ‘‘পেঁয়াজের বাজার এখন এরকমই চড়া থাকবে। পাইকারি বাজারেই আমাদের অনেক দামে মাল কিনতে হচ্ছে। তাই খুচরো বাজারেও তার প্রভাব পড়ছে।’’ এই পরিস্থিতিতে ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের দিকে কোনও পেঁয়াজের গাড়ি যাচ্ছে না বলেই জানা গিয়েছে ট্রাক পরিবহণ সংগঠনগুলির সূত্রে।

Advertisement

ঝংকার মোড়ের খুচরো বাজারে পেঁয়াজ রবিবারও বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা ২৫০ গ্রাম দরে। গত এক সপ্তাহ আগে পাইকারি বাজার দর যেখানে ৬৭ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। তা সাত দিনেই লাফিয়ে উঠেছে ৮২ টাকায়। অন্য খুচরো বাজারগুলিতেও দর একইরকমের চড়া। ফলে শহরের অনেক মাঝারি হোটেল থেকে এখন বিদায় নিয়েছে পাতে লঙ্কার সঙ্গে কাঁচা পেঁয়াজ। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের থাকা হোটেলের মালিক দেবতোষ সান্যাল বলেন, ‘‘রোজকার মেনুতে কোন কোন তরকারি পেঁয়াজ ছাড়া হয়, তা চেষ্টা করে দেখছি। মাংস এবং ডিমের ক্ষেত্রে কিছু করা যাচ্ছে না।’’ তিনিন জানান, কেটারিংয়ের বাজারে কাটছাঁট করা যাচ্ছে না। তবে কোনও কোনও হোটেলে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে, ‘পেঁয়াজ চেয়ে লজ্জা দেবেন না।’’ ফাস্টফুড দোকানগুলোয় কাঁচা পেয়াজ দেওয়া হলেও অনেক কমে গিয়েছে পরিমাণ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement