অশ্রুকুমার সিকদার
সারা জীবন একরকম শিলিগুড়িতেই কাটিয়েছেন, সেখানেই মারা গেলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক এবং সাহিত্যিক অশ্রুকুমার সিকদার। বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। বুধবার বিকেল থেকে তিনি শিলিগুড়ির স্টেশন ফিডার রোড লাগোয়া একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ছিলেন। নার্সিংহোম সূত্রের খবর, কোমড়ের পুরোনো ভাঙা, হৃদরোগ ছাড়াও তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। দীর্ঘ দিন বাড়িতে শয্যাশায়ী ছিলেন। চোখে ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছিলেন না। গত কয়েক দিন ধরে খেতেও পারছিলেন না। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সাহিত্য জগতে শোকের ছায়া নেমে আসে। ২০১২ সালে রাজ্য সরকারের তরফে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অশ্রুকুমার শিকদারকে বঙ্গরত্ন সম্মানে সম্মানিত করেছিলেন।
বিকেলে নার্সিংহোম থেকে তাঁর দেহ বাবুপাড়ার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলেই তাঁর বড় মেয়ে রাজসী কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছন। ছোট মেয়ে শ্রেয়সী শিলিগুড়িতেই থাকেন। তাঁরা জানান, মৃত্যুর পরে কোনও আনুষ্ঠানিকতায় আপত্তি ছিল অশ্রুবাবুর। দেহ কোথাও না নিয়ে যাওয়ার কথাও বলে গিয়েছিলেন। সেই মতো বাড়ি থেকে দেহ সন্ধ্যায় কিরণচন্দ্র শ্মশানঘাটে নিয়ে গিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। বহু মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
১৯৩২ সালের ৮ জানুয়ারি তরাইয়ের পাহাড়গুমিয়া চা বাগানে অশ্রুবাবুর জন্ম। শিলিগুড়ি বয়েজ হাইস্কুলে পড়াশুনো করেন। মাঝে কিছু দিন জলপাইগুড়ি থাকার পর কলকাতা চলে যান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করার পর তিনি আবার উত্তরবঙ্গে ফিরে আসেন। শিলিগুড়ি কলেজে দীর্ঘদিন শিক্ষাকতা করেন। পরবর্তীকলে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধানও হন।
ঘনিষ্ঠ ছিলেন পুলিনবিহারী সেনের। তাঁর কথাতেই রবীন্দ্রসাহিত্য ও রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্র নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। রোটেনস্টাইনকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠির মাইক্রোফিল্ম আমেরিকা থেকে সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপে তা পড়েছিলেন।
তাঁর লেখা ভাঙা বাংলা ও বাংলা সাহিত্য, বাক্যের সৃষ্টি-রবীন্দ্রনাথ, গদ্য সংগ্রহ, রবীন্দ্রনাট্যে রূপান্তর ও ঐক্য ছাড়াও একাধিক বই, গবেষণা সমৃদ্ধ লেখা, প্রবন্ধ সাধারণ পাঠক ও বিশেষজ্ঞ উভয়ের কাছেই সমাদৃত ও আদরণীয় ছিল।