প্রতীকী ছবি।
দার্জিলিঙের বিজনবাড়ি লাগোয়া গৌরিগাঁওতে নতুন হোম-স্টের কাজ পুরোদমে শুরু করেছিলেন কার্শিয়াংয়ের প্রেক্ষা শর্মা। জুন মাসে কাজ শেষ করে বর্ষার পরে পুজোর বুকিং নেওয়া শুরু করবেন ভেবেছিলেন। কয়েক লাখ টাকা লগ্নিও করেন। কিন্তু মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে কাজ থামিয়ে দু’টি হোম স্টে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কবে পরিস্থিতি পর্যটনের জন্য স্বাভাবিক হবে, জানেন না প্রেক্ষা। তাঁর কথায়, ‘‘এত টাকা লগ্নি করে কাজ শেষ হল না। যদি বা এ বছর কাজ শেষ হয়, লোকজন কবে আসবে, কোনও ঠিক নেই।’’ তিনি বলেন, ‘‘সব শিল্পের কথা বলা হচ্ছে, আমাদের পর্যটনের কথা তো কেউ বলছে না।’’
গত বছর পুজো, বড়দিন, নতুন বছর বা মার্চের শুরুতেও রমরমিয়ে চলেছে কার্শিয়াঙের ওই হোম-স্টে। যেমন চলেছে কমলালেবুর জন্য বিখ্যাত সিটংয়ের ঘালেটার বাজারের উপর পাহাড়ি ঢালে তৈরি রাহুল বুঢ়থোকি-র হোম-স্টে। পার্ক স্ট্রিটের তারা খচিত হোটেলের উঁচু পদে চাকরি করেছেন রাহুল। গত বছর মে মাসে পৈতৃক ভিটা সিটংয়ে ফিরে পাইন গাছের পাহাড়ি ঢালে হোম-স্টে চালু করেন। বর্ষার ২-৩ মাস বাদে সারা বছর প্রায় বুকিং ছিল। কিন্তু মার্চ থেকে জীবনটাই যেন বদলে গিয়েছে রাহুলের।
ক্রিকেটের ভক্ত রাহুল বললেন, ‘‘ক্রিকেট খেলা ভুলে গিয়েছি। রাতে ঘুম আসে না। চাকরি ছেড়ে মায়ের জমিতে জমানো টাকায় হোম-স্টে করলাম। লোকজন পছন্দই করছিল। দিল্লি, চেন্নাই, কলকাতা থেকে পর্যটক আসছিলেন। এখন চলবে কী, করে তাই ভাবছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও বাইরের লোক আসাটা স্থানীয়েরা কী ভাবে নেবেন, তার উপরও তো অনেক কিছু নির্ভর করবে।’’ একই কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন কার্শিয়াংয়ের প্রেক্ষা বা ডুয়ার্সের ছোট রির্সটের মালিক মহাশ্বেতা রায়। ডুয়ার্সের টিলাবাড়িতে দু’দশক ধরে রিসর্ট চালাচ্ছেন মহাশ্বেতা। ২১ মার্চ অবধি পর্যটক বোঝাই ছিল তাঁর রিসর্টে। তার পর থেকে সুনসান। জনা দশেক কর্মীকে প্রথম মাসে পুরো টাকা দিতে পারলেও পরের মাসে পারেননি। মহাশ্বেতা বলেন, ‘‘আমার কর্মীরা ভাল। সবাই বলেছে, পরে যদি ভাল ব্যবসা হয়, তা হলে বকেয়া টাকা দিতে। খাবারও দিচ্ছি সাধ্যমতো। সারা বছর আমার ব্যবসা ছিল। এখন ঘরের টাকায় চলছি।’’ তিনিও বলেন, ‘‘সরকার সাহায্যের হাত না বাড়ালে এ ভাবে বেশি দিন পারব না।’’ তাঁরও দুশ্চিন্তা, ‘‘পরে বাইরের পর্যটক আসা শুরু করলেও স্থানীয়েরা তা কতটা মানবেন, সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। প্রশাসন এগিয়ে না এলে আমাদের পথে বসা ছাড়া পথ নেই।’’
সরকারি হিসেবে, দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় হোম-স্টে’র সংখ্যা ৩ হাজার। কালিম্পংয়ে বেশি, ১৭০০ মত। ডুয়ার্সে ছোট, বড় বা মাঝারি রিসর্ট রয়েছে ৩০০-এর বেশি। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত লক্ষাধিক মানুষ। ইউনাইটেড হিমালয়ান হোম-স্টে অ্যান্ড ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের কো-অর্ডানেটর জিতু গিরি বলেন, ‘‘আমরা করোনা যুদ্ধে লড়াই করে এখনও টিকে আছি। কত দিন পারব, জানি না!’’