সঞ্চারী রায় মুখোপাধ্যায়
১৯৮০-৮৩ সাল, জীবনের এই তিনটে বছর আমার কাছে স্মরণীয়। ওই সময়টাই প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতি শিক্ষায় হাতেখড়ি। ওই ‘ডিপার্টমেন্ট’ মানেই বুঝতাম অধ্যাপক দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অর্থনীতির বিভাগীয় প্রধান। অদ্ভুত ‘ক্যারিশ্ম্যাটিক’। দীপকবাবু তখন যেন প্রেসিডেন্সির অর্থনীতি বিভাগের সঙ্গে সমার্থক। সেখানে ‘ঝিমা’ বা আজকের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র। ঝিমা নামেই উনি কলেজে পরিচিত। উনি, ঝিমা, দীপকবাবুরই ছেলে।
ওই কয়েকটা বছর অভিজিৎকে সামনে থেকেই নিয়মিত দেখেছি। ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভা বলতে যা বোঝায়, একেবারই অক্ষরে অক্ষরে তাই। ক্লাসের ফাঁকে আমরা ক্যান্টিন বা পোর্টিকোতে আড্ডায় বসতাম। অভিজিৎকেও সেখানে দেখতাম। কিন্তু সেখানেও ওঁর চোখেমুখে পড়াশোনা। মুখে মুখে বড় বড় অঙ্ক যে ভাবে করে দিত, অবাক হয়ে যেতাম। মনে হত, কাগজকলম নয়, আকাশেই যেন ও অঙ্ক কষে ফেলছে। এই মেধা তো সত্যিই নজিরবিহীন। সেই সময়ে ঝিমার মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও পরিচয়। বাবা-মা এত বড় মাপের অর্থনীতিবিদ। তখনই দেখেছি, ছেলেও প্রবল গতিতে এগোচ্ছে।
প্রেসিডেন্সিতে পড়ার পর অভিজিতের সঙ্গে যোগাযোগ সে ভাবে না থাকলেও ওঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিদি বলে ডাকি আমি। গত বছরও কলকাতার ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিসে একটি অনুষ্ঠানে দেখা হয়। অর্থনীতি তো বটেই, বর্তমান যুগের অনেক কিছু নিয়েই কথা হয় তখন। উনি যে ধারার অর্থনীতি নিয়ে কাজ করেন, তার সঙ্গে আমার কাজের মিল আছে। পরে পড়াশোনা, গবেষণা, শিক্ষাকতার সুবাদে অভিজিতের বই এবং বিভিন্ন তথ্য সমৃদ্ধ গবেষণামূলক লেখা পড়েছি। ‘পুয়োর ইকোনমিক্স’ বইটা পড়ে মনে হয়েছিল, অসাধারণ। এই অক্টোবরেই ওঁর ‘গুড ইকোনমিক্স ইন হার্ড টাইমস’ প্রকাশিত হচ্ছে।
একেবারে মাটিতে নেমে দারিদ্রতা ও অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা। গরিবদের মধ্যে সবচেয়ে গরিব মহিলারা— এ তো ওঁরই কাজের অঙ্গ। আমার পড়াশোনা, কাজের ধারাও এক। এর পরে অর্থনীতিতে অভিজিৎ দেখিয়েছেন, মহিলাই শুধু নন, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের দিক থেকে শিশুরা সবচেয়ে গরিব। অসাধারণ ভাবনা। অভিজিৎদের তৈরি ‘আব্দুল লতিফ জামিল পভার্টি অ্যাকশন ল্যাব’ যা কাজ করছে, তাকে কুর্নিশ জানাতেই হয়।
(বিভাগীয় প্রধান, অর্থনীতি, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়)