দূষণে জেরবার শিলিগুড়ি, চোখেমুখে ধোঁয়া ঢুকে নাজেহাল পথচারীরা

সংগঠনের নেতাদের দাবি, পুরনো থেকে নতুন অটোয় বদলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই সময় আর নতুন করে ঝামেলায় কেউ যেতে চাইছেন না। পরিবহণ দফতর এবং ট্রাফিক পুলিশও প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০৩
Share:

দূষণ। নিজস্ব চিত্র

দৃশ্য এক: হিলকার্ট রোডে হাসমিচক এলাকায় ট্রাফিক সিগনালে দাঁড়িয়ে পড়া একটি সিটি অটো। গলগল করে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে অটোর পাইপ থেকে। নাকে জ্বালা ধরাচ্ছে ঠিক পিছনে স্কুটিতে বসা এক আরোহীর। বাকি স্কুটি, বাইক বা পথচারীদের দূষণের জেরে হাসফাঁস অবস্থায় পড়লেন।

Advertisement

দৃশ্য দুই: বিধান রোডে সন্ধেবেলা বাজার করছেন এক বৃদ্ধ। কিন্তু ট্রাফিক জ্যামে আটকে পড়া সিটি অটো থেকে ক্রমাগত বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া। নাকে রুমাল চাপা দিয়েও রক্ষা পেলেন না। নাকেমুখে ধোঁয়া ঢোকায় কাশতে শুরু করলেন বৃদ্ধ। বোতলের জল কিনে চোখেমুখে ছিটিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হলেন।

দেশের অন্য বড় শহরগুলোর সঙ্গে দূষণের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে শিলিগুড়ি। শহরের দূষণের সিংহভাগ সিটি-অটো থেকেই হয় বলে দাবি পরিবেশপ্রেমী সংস্থাগুলোর। কিন্তু দূষণ নিয়ে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে প্রায় দেড় বছর হল শিলিগুড়ির টোটো মালিক ও চালকদের সম্পর্ক এক রকম চুকে গিয়েছে। ওই সময় থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে শহরে সিটি অটোর ধোঁয়া পরীক্ষার কাজ। ১৫ বছরের বেশি বয়সের অটো পরীক্ষা করাতে গেলেই ‘আনফিট’ হয়ে যাচ্ছিল। তার পর থেকে শহরে সিটি অটোর ফিট সার্টিফিকেট নেওয়া এবং ধোঁয়া পরীক্ষার কাজ বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

সংগঠনের নেতাদের দাবি, পুরনো থেকে নতুন অটোয় বদলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই সময় আর নতুন করে ঝামেলায় কেউ যেতে চাইছেন না। পরিবহণ দফতর এবং ট্রাফিক পুলিশও প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। প্রায় দেড় বছর থেকেই পুরনো অটো বদলে নতুন অটো নামানো নিয়ে নানা বিতর্ক শুরু হয়েছে। শিলিগুড়ি ম্যাক্সিক্যাব ড্রাইভার্স অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা নেতা নির্মল সরকার বলেন, ‘‘পুরনো গাড়ি দূষণের জন্য ফিট সার্টিফিকেট পাচ্ছিল না অনেক দিন থেকেই। তাই আমরা সার্টিফিকেট নেওয়া ছেড়ে দিয়েছি বছর দেড়েক হল। পুরনোর বদলে নতুন যখন নামাতেই হবে, আর ক’টা দিন চালিয়ে দেব।’’

সংগঠনের কর্তার এই মন্তব্যের পরেও শহরের দূষণের দায় পরিবহণ কর্তারা কি দায় এড়াতে পারেন? আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিধি অনুসারে রাস্তায় ফিট সার্টিফিকেট না থাকলে পুলিশের কী করণীয়, তা আইনেই বলা রয়েছে। তাই নতুন করে নির্দেশ দেওয়ার কোনও জায়গা নেই। তা হচ্ছে কি না, বলতে পারছি না।’’ ফিট সার্টিফিকেট না থাকলে স্বাভাবিক নিয়মেই কেন সেগুলিকে আটকানো হবে না? শিলিগুড়ি ট্রাফিক পুলিশের এডিসিপি ডম্বর সিংহ সোনার বলেন, ‘‘পুজোর সময় ভিড় সামলানো থেকে শুরু করে কিছু বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয়। ছট পুজোর পর থেকে ট্রাফিক পুলিশ রাস্তায় নামবে। ফিট সার্টিফিকেট না থাকলে ধরা হবে সবাইকেই।’’

কিন্তু চালক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা না করে কোনও অটো বন্ধ করলে রাস্তা অবরোধ করে এর আগেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অটো চালকরা।

সাধারণ মানুষের বক্তব্য, প্রশাসন যা করার তাড়াতাড়ি করুক। না হলে ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে কষ্ট পেতে হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement