ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে শহর দূষণ অবিলম্বে বন্ধ হোক

শিলিগুড়ি শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যান চলাচল। আর তার জেরে বেড়ে চলেছে হর্নের দাপট। বিশেষ করে হাসপাতাল, স্কুলের সামনে জোরাল শব্দে গড়ির হর্ন ক্রমাগত বেজে চলার অভিজ্ঞতা বাসিন্দাদের অজানা নয়। শহরের কয়েকটি পরিবেশপ্রেমী সংস্থাও তা নিয়ে সরব হন। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সামনে হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অথচ এখন আর কেউ তা মানেন না।

Advertisement
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২৮
Share:

ডাম্পিং গ্রাউন্ডের পাশ দিয়ে পথ চলা দায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

শিলিগুড়ি শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যান চলাচল। আর তার জেরে বেড়ে চলেছে হর্নের দাপট। বিশেষ করে হাসপাতাল, স্কুলের সামনে জোরাল শব্দে গড়ির হর্ন ক্রমাগত বেজে চলার অভিজ্ঞতা বাসিন্দাদের অজানা নয়।

Advertisement

শহরের কয়েকটি পরিবেশপ্রেমী সংস্থাও তা নিয়ে সরব হন। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সামনে হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অথচ এখন আর কেউ তা মানেন না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাই ওই রাস্তায় হর্নের শব্দ রোখার কোনও ব্যাপারও নেই। কারও গরজও নেই। শিলিগুড়ি বয়েজ হাই স্কুল, হাকিমপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের মতো রাস্তা লাগোয়া স্কুলের পড়ুয়ারাও রেহাই পান না ওই একই যন্ত্রণা থেকে। আচমকা জোরাল শব্দে বাইক বা গাড়ির হর্নের শব্দ স্কুলের পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে বিরক্তির কারণ।

শহরের সমস্যা আরও অনেক রয়েছে। এখনও শিলিগুড়ি শহরের নিকাশি ব্যবস্থা সেই পুরনো আমলেরই রয়ে গিয়েছে। কয়েকটি নতুন হাইড্রেন হলেও বেশিরভাগ নিকাশি নালা দিয়ে জল সরে না। বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগীরা তা জানেন। শিলিগুড়ির মতো শহরে ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা প্রয়োজন। বতর্মানে নিকাশিগুলি নিয়মিত সাফাই না করার জন্য নদর্মাগুলিতে মাটি জমতে থাকে। তাতে নিকাশি বেহাল হয়ে পড়ে। খুব কম সময়ই নর্দমার মাটি তুলে পরিষ্কার করতে দেখি। নিকাশির মধ্যে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বা থার্মোকলের টুকরো জমেও নিকাশি বেহাল হয়ে পড়ে অনেক জায়গায়।

Advertisement

কয়েক দশক ধরে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে অবৈজ্ঞানিক ভাবে আবর্জনা ফেলা শহরের সব চেয়ে বড় সমস্যা। সেখানকার দূষণের জেরে লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের প্রতি নিয়তই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে বর্জ্য জমে এলাকার পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে। বর্ষার জলে মিশে আবজর্না আশেপাশে বসতি এলাকায় যায়। অনেক সময়ই শুনি বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে নষ্ট করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু তা কবে হবে, আদৌ হবে কি না তা আমাদের মতো বাসিন্দাদের কাছে স্পষ্ট নয়। শুনেছিলাম পুঁটিমারিতে আলাদা জমি নেওয়া হয়েছে। সেখানে শহরের আবর্জনা ফেলার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু ওই এলাকার বাসিন্দারা তাতে রাজি নন। কেন না সেখানকার পরিবেশ নষ্ট হবে বলে তাঁরা সরব হয়েছেন। ডাম্পিং গ্রাউন্ডে সীমানা প্রাচীর দেওয়া হলেও তাতে সমস্যা যে মিটবে না তা স্পষ্ট। বরং বিজ্ঞানসম্পত উপায়ে কী ভাবে ওই বর্জ্য নষ্ট করা যায় অবিলম্বে তার ব্যবস্থা করা উচিত।

শহরের আর এক জ্বলন্ত সমস্যা মহানন্দা নদী দূষণ। শহরের জীবনরেখা মহানন্দাকে বাঁচাতে ‘মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যান’ নেওয়ার কথা ঘটা করে জানানো হয়েছিল সেই বাম জমানা থেকেই। তাঁরাও কিছু করে উঠতে পারেননি। এখন যাঁরা রয়েছেন তাঁরাও কিছু করে উঠতে পারছেন না। তার উপর ওই কাজ নিয়ে দুনীর্তির অভিযোগও উঠেছে। তাই বাকি কাজ কবে শেষ হতে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকরই। এই পরিস্থিতিতে মহানন্দা নিয়ে সচেতন বাসিন্দাদের তাই দুশ্চিন্তার কারণ রয়েছে। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে মহানন্দা সেতুর নিচে থাকা খাটাল ওই নদী দূষণকে মারাত্মক জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া নদীতে মৃত গবাদি পশুর দেহও ভাসতে দেখা যায়।

সব শেষে বলতে চাই ভোট এসেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির তরফেই প্রচারের নানা আয়োজন শহর জুড়েই দেখা যাচ্ছে। হোর্ডিং, ব্যানারের ছয়লাপ। দেওয়াল লিখন, বিভিন্ন রাস্তা নিজেদের দলের পতাকা দিয়ে ভরিয়ে তুলতে খামতি নেই। সেই সঙ্গে যত্রতত্র পোস্টার লাগানোর প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। ভোট পর্ব মিটলে সেগুলি সমস্ত দ্রুত সরিয়ে ফেলা উচিত বলে মনে করি। কিন্তু বিভিন্ন ভোটের পরই দেখি হোর্ডিং, ব্যানার একাংশ সরিয়ে ফেলা হলেও বেশ কিছু থেকে যায় দিনের পর দিন ধরে। বিশেষ করে দেওয়াল লিখনগুলি থেকে যায়। প্রশাসনের তরফে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না-হলে শহরের সৌন্দর্য তাতে নষ্ট হবে বৈকি?

সন্তোষ সাহা, প্রধাননগর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement