আলিপুরদুয়ারের বিজি রোডে জমে বৃষ্টির জল। নিজস্ব চিত্র।
বর্ষা এখনও আসেনি। তার আগেই বৃষ্টির ঝোড়ো ইনিংস শুরু আলিপুরদুয়ারে। ইতিমধ্যেই ভেঙে গিয়েছে গত তিন দশকের যাবতীয় সব রেকর্ড। রাতভর প্রবল বৃষ্টির জেরে বুধবার সকালেও আলিপুরদুয়ার শহরের বেশ কিছু এলাকায় জল জমে যায় বলে অভিযোগ। নালার মুখ বন্ধ থাকার জেরে বাড়িতে জল ঢুকে যাওয়ার অভিযোগ তুলে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিক্ষোভও দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৩ সাল থেকে তাঁদের দফতরে আলিপুরদুয়ারের প্রতি বছরের বৃষ্টির পরিমাণের পরিসংখ্যান রয়েছে। যে পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৯৫ সালে জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে ৬এপ্রিল পর্যন্ত আলিপুরদুয়ারে ৪২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ২০০৫সালের এই দিন পর্যন্ত আলিপুরদুয়ারে বৃষ্টি হয়েছিল ৪৪৭ মিলিমিটার। ২০১৬ সালে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত আলিপুরদুয়ারে ৩৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। কিন্তু এ বছর জানুয়ারি মাস থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত আলিপুরদুয়ারে বৃষ্টি হয়েছে ৫৬৩ মিলিমিটার। এর মধ্যে শুধুমাত্র চলতি মাসের ছ’দিনেই প্রায় ৪৬১মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, উত্তরবঙ্গের এই এলাকায় সাধারণত মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। কিন্তু এ বার ৬ এপ্রিল পর্যন্ত যে পরিমাণ বৃষ্টি হল, তা গত তিনদশকে কখনও দেখা যায়নি। আবহাওয়া দফতরের আলিপুরদুয়ারের সুপারভাইজ়ার পিযূষ বসু বলেন, “এ বছর জানুয়ারি মাস থেকে এপ্রিলের ৬ তারিখ পর্যন্ত আলিপুরদুয়ারে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, সেটা সর্বকালীন রেকর্ড।”
মঙ্গলবার গভীর রাত থেকেও ফের একবার প্রবল বৃষ্টি হয় আলিপুরদুয়ারে। সেচ দফতরের হিসাব অনুযায়ী বুধবার সকাল পর্যন্ত শেষ চব্বিশ ঘণ্টায় আলিপুরদুয়ারে বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১৭২ মিলিমিটার। যার জেরে এ দিন সকাল থেকেই শহরের একাধিক ওয়ার্ডের বেশ কিছু নীচু এলাকায় জল জমে যায়। দুর্ভোগে পড়েন মানুষ। আলিপুরদুয়ার শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের একটি রাস্তার পাশে থাকা নালার মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকায় জমা জল বেশ কয়েকটা বাড়িতে ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ। যার প্রতিবাদে সেখানে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। ছুটে যান ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর গার্গী তালুকদার। তিনি বলেন, “পুরকর্মীদের সেখানে নিয়ে আসি। হিউম পাইপ ভেঙে যাওয়ায় সমস্যা হয়েছিল। রাস্তার একাংশ কেটে দিয়ে জল বড় নর্দমায় বার করে দেওয়া হয়। ফলে সমস্যা মিটে গিয়েছে।”
এ দিকে প্রাক বর্ষার বৃষ্টিতেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় জল জমা নিয়ে শহরবাসীর মনে চিন্তা বাড়ছে। আলিপুরদুয়ার পুরসভার চেয়ারম্যান প্রসেঞ্জিৎ কর অবশ্য বলেন, “আলিপুরদুয়ারে এ দিন প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। সেজন্য এক-দু’জয়াগয় সামান্য জল জমেছিল। পুরসভার তরফে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শহরের আর কোথাও জল জমেনি।”