প্রতীকী ছবি
করোনাভাইরাস নিয়ে হইচইয়ের মধ্যেই গত ২৬ জানুয়ারি তিনি চিন থেকে ফিরেছেন। অথচ তিনি বা তাঁর বাড়ির লোক সেই তথ্য স্বাস্থ্য দফতরে জানাননি। স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে স্বাস্থ্যকর্তারা ন’দিন পর মঙ্গলবার যখন কালচিনির হ্যামিল্টনগঞ্জে তাঁর বাড়িতে পৌঁছলেন ততক্ষণে তিনি আবার চলে গিয়েছেন কলকাতা।
ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যকর্তারা ওই ব্যক্তিকে ফোনও করেছেন। তবে কলকাতা থেকেই তিনি বলছেন, “আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। আমার কিছু হয়নি। কেন আমায় বিরক্ত করছেন?” আলিপুরদুয়ার জেলার স্বাস্থ্যকর্তারাও একবারের জন্যও তাঁকে না দেখেই জানিয়ে দিচ্ছেন, ওই ব্যক্তি সুস্থ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন।
স্বাস্থ্যকর্তাদের এই ঘোষণা ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধছে। কারণ খোদ জেলার চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, চিন থেকে কেউ এদেশে এলে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা হচ্ছে। পর্যবেক্ষণেও রাখা হচ্ছে। হ্যামিল্টনগঞ্জের ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পূরণ শর্মা পাল্টা বলেন, ‘‘উনি ১১ দিন আগে চিন ছেড়েছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে এতদিনে ওঁর মধ্যে রোগের উপসর্গ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আমরা তাঁর সঙ্গে কিংবা তাঁর বাড়ির বাকি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, এই ক’দিনে জ্বর বা হাঁচি-কাশি ওঁর হয়নি। ’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, হ্যামিল্টনগঞ্জের বাসিন্দা ৪৭ বছরের ওই ব্যক্তি চিনের গুয়াংঝুতে একটি হোটেলে কাজ করেন। কলকাতা থেকে মোবাইলে ওই ব্যক্তি জানান, বছর সাতেক আগে তিনি চিনে পাড়ি দেন। কিন্তু গুয়াংঝুতে তিনি রয়েছেন প্রায় ছ’বছর। ২৪ জানুয়ারি গুয়াংঝু থেকে বাড়ি রওনা হন। ২৬ জানুয়ারি কলকাতা পৌঁছন। ওইদিনই বাড়িতেও পৌঁছন। স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, ২৬ জানুয়ারি করোনাভাইরাস নিয়ে ততটা হইচই ছিল না। সেইজন্যই হয়তো কলকাতা বিমানবন্দরে তাঁর কোনও পরীক্ষা করা হয়নি। সোমবার রাতে চিন থেকে এই ব্যক্তির হ্যামিল্টনগঞ্জের বাড়িতে ফেরার কথা জানতে পারেন স্বাস্থ্যকর্তারা। মঙ্গলবার সকালেই তাঁর বাড়িতে ছুটে যান পূরণ শর্মা। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, সোমবার বিকেলে ট্রেন ধরে শিলিগুড়ি গিয়েছেন তিনি। এ দিন বাগডোগরা থেকে বিমানে তিনি কলকাতা যান।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। তাঁর বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু গত কয়েকদিনে তাঁদের কারও কোনও রোগের লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে বিষয়টা আমরা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছি। প্রয়োজনে ওই ব্যাক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে ওঁর মোবাইল নম্বরও দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর্মীরা উনি আসার পর থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন বাড়িতে গিয়ে প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেবেন। আলিপুরদুয়ারে ফেরার পর ওই ব্যক্তির উপর জেলা স্বাস্থ্য দফতরও নজর রাখবে।’’
কলকাতায় ওই ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে বিরক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘‘২৬ জানুয়ারি কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পর বোনের কাছ থেকে করোনাভাইরাসের কথা জানতে পারি। আমি চিনের যেখানে থাকি সেখানে করোনাভাইরাসের প্রভাব ছিল না। গত কয়েকদিনে আমার জ্বর বা হাঁচি-কাশিও কিছু হয়নি। তারপরও কেন আমায় বিরক্ত করছেন?’’