সরকারি হাসপাতাল থেকে বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টারের স্লিপ দেওয়া হয়েছিল। তিনি তার প্রতিবাদ করেছিলেন৷ শুধু তাই নয়, জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছিলেন৷ অভিযোগ, সেই ঘটনার জেরেই এ দিন জলপাইগুড়ি হাসপাতালে নিজের পাঁচ বছরের ছেলেকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়ে হেনস্থা হতে হল ধূপগুড়ির বাসিন্দা এক গৃহবধুকে৷ হাসপাতাল চত্বরেই কেঁদে ফেলেন তিনি৷ এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে হাসপাতালেরই এক চিকিৎসকের দিকে৷ জেলা স্বাস্থ্য দফতর বিষয়টি নিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে৷
ঘটনার সূত্রপাত, গত ৬ ফেব্রুয়ারি৷ সে দিন ধূপগুড়ি থেকে ছেলেকে নিয়ে জলপাইগুড়ি হাসপাতালের আউটডোরে শিশু বিভাগে এসেছিলেন ওই গৃহবধূ প্রমিতা রায়৷ ওই দিন তাঁর অভিযোগ ছিল, শিশুটিকে দেখে সেখানকার এক চিকিৎসক হাসপাতালের আউটডোরেই আরেক ঘরে বসা এক সার্জেনের কাছে তাকে রেফার করে৷ তাঁর কথা মতো ওই ঘরে যাওয়ার পর সেই চিকিৎসক ছেলেকে দেখে আলট্রাসোনগ্রাফি করাতে বলেন৷ অভিযোগ, তিনি তখন চিকিৎসকের কাছে হাসপাতালে তা হবে কি না, জানতে চাইলে চিকিৎসক তাঁকে বলেন, “বাইরে করতে হবে৷ এবং ছয়-সাতশো টাকা লাগবে৷” আরও অভিযোগ, এরপরই সেখানে থাকা এক ব্যাক্তি তাঁর হাতে একটি প্রাইভেট ডায়গনস্টিক সেন্টারের স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে বলেন, টোটোতে চেপে সেখানে চলে যেতে৷ বিষয়টি নিয়ে ওইদিনই সিএমওএইচের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই গৃহবধূ৷ যার জেরে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে৷ এবং পরের দিনই প্রমিতাদেবীর ছেলের আলট্রা সোনোগ্রাফি হাসপাতালেই করা হয়৷
প্রমিতাদেবী জানিয়েছেন, ওই আলট্রা সোনোগ্রাফির রিপোর্ট দেখাতেই ছেলেকে নিয়ে এ দিন ফের হাসপাতালে এসেছিলেন তিনি৷ কিন্তু তাঁর অভিযোগ, “হাসপাতালের আউটডোরের একটি ঘরে যেতেই আমাকে দেখে রীতিমতো ক্ষেপে ওঠেন ওই চিকিৎসক৷ চিৎকার করে বলতে থাকেন, এই মহিলাই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন৷ তারপর আমাকে জোর করে উপর তলায় নিয়ে যান ওই চিকিৎসক৷ এবং অনেকের সামনে চিৎকার করে বলতে থাকেন, আমি ওনার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছি৷ সেটা যেন আমি মুচলেকা দিয়ে লিখে দিই৷’’ তিনি দাবি করেন, ‘‘একটি সাদা কাগজেও সই করতে বলেন আমায়৷ ভয় পেয়ে দৌড়ে ছেলেকে নিয়ে সেখান থেকে নীচে নেমে আসি আমি৷” এরপরই হাসপাতাল চত্বরে আতঙ্কে কেঁদে ফেলেন তিনি৷ তার এই অবস্থা দেখে অন্য রোগীর আত্মীয়রা সেখানে ছুটে যান৷ তাঁরাও হাসপাতালের নানা অব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন৷
যদিও অভিযুক্ত চিকিৎসক অবশ্য কোনও অভিযোগ মানতে চাননি৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমি কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করিনি, কাউকে হেনস্থাও করিনি৷ এর বাইরে যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলবেন৷’’ যদিও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা কিন্তু এ দিনের ঘটনাকে ভাল ভাবে নিচ্ছেন না৷ সিএমওএইচ জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘শুধু জলপাইগুড়ি হাসপাতাল কেন, জেলার কোনও হাসপাতালেই এ ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না৷’’
এ দিনের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর৷ পাশাপাশি সিএমওএইচ এও জানিয়েছেন, গত ৬ফেব্রুয়ারির অভিযোগ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হাতে পেলেই সেই অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷