Haldibari Station

স্মৃতির ডানায় ফিরল সবুজ ট্রেন

কোচবিহার রাজ্যের হলদিবাড়িতে রেলপথ স্থাপিত হলেও কোচবিহারের রাজপরিবারের সদস্যেরা কলকাতা থেকে কোচবিহার পৌঁছতে হলদিবাড়ি স্টেশনেই নামতেন।

Advertisement

সুদীপ্ত মজুমদার

হলদিবাড়ি শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৫৯
Share:

নবরূপ: হলদিবাড়ির নতুন স্টেশন ভবন চত্বর। নিজস্ব চিত্র

রেল সরণি নয়, এ যেন জুড়ে যাচ্ছে স্মৃতির সরণি! সবুজ ট্রেনের স্মৃতি উস্কে দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমানায় কাঁটাতার কেটে জুড়ছে ট্রেন লাইন। খবর শুনেই স্মৃতিকাতরতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন হলদিবাড়ির প্রবীণ নাগরিকেরা।হলদিবাড়ি নামে জনপদটি গড়ে ওঠার পিছনে রেলের কতখানি ভূমিকা ছিল, জানা যায় পুরনো ইতিহাস থেকে। তৎকালীন কোচবিহার রাজ্যের মধ্যে হলদিবাড়িই প্রথম মিটার গেজ রেলপথের মাধ্যমে বৃহত্তম বাংলার সঙ্গে যুক্ত হয়। ১৮৬২ সালের পর নর্দার্ন বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগের কাজ শুরু করে। ১৮৭০ সালে হলদিবাড়িতে স্টেশন ও রেললাইন পাতার জন্য জরিপের কাজ শুরু হয়। স্টেশনটি তৈরি হয় ১৮৭৬ সালে। জুট কোম্পানিগুলো আসতে শুরু করে।

Advertisement

কোচবিহার রাজ্যের হলদিবাড়িতে রেলপথ স্থাপিত হলেও কোচবিহারের রাজপরিবারের সদস্যেরা কলকাতা থেকে কোচবিহার পৌঁছতে হলদিবাড়ি স্টেশনেই নামতেন। তারপর ইমিগ্রেশন রোড ধরে তিস্তা নদী পেরিয়ে রাজবাড়ি ফিরতেন। তৎকালীন রেলগাড়ি প্রসঙ্গে হলদিবাড়ির প্রবীণ নাগরিক তথা প্রাক্তন রেলওয়ে ট্র্যাফিক ইনস্পেক্টর সত্যরঞ্জন রক্ষিত বলেন, ‘‘হলদিবাড়ি স্টেশনটি উত্তরপূর্ব ভারতের প্রাচীনতম স্টেশন। সেই সময় ট্রেনে চারটি শ্রেণি ছিল। প্রথমে ট্রেনের শৌচাগার ও বসার আসন ছিল না। দরজা বাইরের দিকে খুলত। প্রথমে এই স্টেশন ও রেলপথটি নর্দার্ন বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ের অধীনে থাকলেও পরে তা উত্তর-পূর্ব রেলের অধীনে চলে যায়। আগে ইঞ্জিন পিছন দিকে যেতে পারত না। তাই ইঞ্জিন ঘোরানোর জন্য চক্কর লাইন ছিল। সেই সময়ের ট্রেন চলাচল করত শিয়ালদহ-নীলফামারী-হলদিবাড়ি-শিলিগুড়ি রুটে। দেশভাগের পরেও ট্রেন পুরনো রুট দিয়েই চলত।’’

শঙ্করলাল আগরওয়াল বললেন, ‘‘১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট রাতে পঞ্চগড়ের বাড়ি ছেড়ে গরুগাড়িতে হলদিবাড়ি চলে আসি। ফিরিঙ্গিডাঙ্গার কাছাকাছি ছিল স্টেশনটি। পরে দাদার বিয়ে হয় বর্তমান বাংলাদেশের জয়পুরহাটে। সেই বিয়েতেই প্রথম ট্রেনে চড়া। সেই সময় ট্রেনের রং ছিল সবুজ। সেই সময় হলদিবাড়ি থেকে বর্তমান বাংলাদেশ হয়ে কলকাতার ট্রেন পৌঁছত মাত্র আট ঘণ্টায়।’’ স্থানীয় গৃহবধূ গায়ত্রী দেবী আগরওয়াল বলেন, ‘‘আমাদের পুরনো বাড়ি ছিল বাংলাদেশের সোদপুরে। ব্যবসায়িক কারণে পরে শিলিগুড়িতে আরেকটি বাড়ি হয় আমাদের। দুই বাড়ির মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ট্রেন। স্টিম ইঞ্জিনে সেই ট্রেনে বহুবার সোদপুর থেকে শিলিগুড়ি এসেছি।"

Advertisement

হলদিবাড়ির আর এক প্রবীণ রুহুল আমিন সরকার বলেন, ‘‘এই রুটে শেষবারের মতো ট্রেন চলেছিল ১৯৬৫ সালে। তখন আমরা স্কুলে পড়ি। কু-ঝিকঝিক আওয়াজ করে ট্রেনটি হলদিবাড়িতে এসে দাঁড়াত। আমরা স্কুলের জানলা দিয়ে তা দেখতাম।’’ তাঁর কথায়, পণ্যের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেন চললে দুই বাংলার সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মেলবন্ধন আরও দৃঢ় হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement